বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনে এসেছে পরিবর্তন। বিজ্ঞাপনের ভাবনা এবং নির্মাণে এসেছে আধুনিকতা। আর তাই পাল্টে গেছে বিজ্ঞাপনের অবয়ব। ২০০০ সালের পর থেকে একটু একটু করে পরিবর্তন শুরু হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এখন বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের মান একেবারেই ঈর্ষণীয়। আর এই পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিয়েছেন একঝাঁক তরুণ।
আগে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন মানেই ছিল জিঙ্গেল এবং নৃত্য। নাচ-গান ছাড়া বিজ্ঞাপন যেন জমতোই না। একই ধারায় ঘুরপাক খাচ্ছিল বিজ্ঞাপনের আইডিয়া। সেখান থেকে সড়ে এসে গল্প নির্ভর বিজ্ঞাপনের চর্চা শুরু হয়েছিল। যা এখন অনেকটাই পরিপক্ব। গ্রামীণফোনের 'মায়ের জন্য ছেলের মোবাইল কিনে নিয়ে যাওয়া', 'সুখবর' ও 'ফুল চুরি করে শহীদ মিনারে দেওয়া', বাংলালিংকের 'দিন বদল', নকিয়ার 'এ শুধু বাংলাতেই সম্ভব', মেরিল স্প্যাশ্লের 'সৌন্দর্য মানেই শুধু ফর্সা নয়' প্রভৃতি বিজ্ঞাপন দেখলেই পরিবর্তনের ধারাটা বোঝা যায়। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বলা যায়- বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষ স্থানেই রয়েছে। ভারতের সঙ্গে তুমুল প্রতিযোগিতা হচ্ছে মানের উৎকর্ষতায় কারা সেরা সেই বিচারে। আর পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা কিংবা অন্যান্য দেশকে পেছনে ফেলেছে অনেক আগেই। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। আগামী দশ বছরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও বাংলাদেশ যুদ্ধ করবে বিজ্ঞাপন বাজারে। অন্যদিকে বলা যায়, আগে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনে ছিল ভারতীয়দের একচ্ছত্র আধিপত্য। ভারতে গিয়ে কিংবা ভারত থেকে নির্মাতা এনে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করা হতো। কিন্তু এখন বাংলাদেশ ভাবনায় এবং নির্মাণে স্বয়ং সম্পূর্ণ। হয়তো সেই দিন বেশি দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশ থেকে নির্মাতারা গিয়ে অন্য দেশে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করবে।
বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের পরিবর্তনের পেছনে কাজ করেছেন এবং এখনো করছেন কিছু তরুণ যোদ্ধা। তাদের মধ্যে অন্যতম মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, গাউসুল আজম শাওন, অমিতাভ রেজা, কিসলু গোলাম হায়দার, পিপলু আর খান, গাজী শুভ্র প্রমুখ। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের বর্তমান অবস্থান প্রসঙ্গে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, 'বিজ্ঞাপনে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। ২০০০ সালের পর থেকে আমাদের উন্নতি শুরু। কারণ অনেক তরুণ তখন ইন্ডাস্ট্রিতে চলে এসেছিল। আর তরুণ মানেই আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গী। প্রযুক্তির কল্যাণে নতুন প্রজন্ম সবসময় এগিয়ে থাকে। আমরাও আধুনিক দুনিয়ার আলো দেখেছি। ফলে আমাদের ভাবনায় তা ছাপ ফেলেছে। এতে নতুন নতুন ভাবনার বিজ্ঞাপন প্রচার হয়েছে। দর্শকও সাড়া দিয়েছে। বর্তমানে আমাদের বিজ্ঞাপন শিল্পী যথেষ্ট আধুনিক এবং সময়োপযোগী নির্মাণ করছে।'
বিজ্ঞাপনের আইডিয়া মেকার হিসেবে গাউসুল আজম শাওনের ভূমিকা অনেক। তিনি পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলেন, 'আগে বিজ্ঞাপনে শিল্পী এবং আর্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্টারা কাজ করতেন। আমি বলতে চাই, বিজ্ঞাপন অনেকটা সায়েন্স নির্ভর। অনেক রিসার্চের পর একটা বিজ্ঞাপন তৈরি হয়। আমরা যখন কাজ শুরু করলাম তখন থেকেই কনজুমারের সঙ্গে ব্র্যান্ডের ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করতে শুরু করলাম। কনজুমারের চাহিদা এবং তার মনোজগৎ পড়ার চেষ্টা করলাম। আর সেভাবেই বিজ্ঞাপন তৈরি হতে শুরু করল। এভাবেই আমরা অডিয়েন্সের কাছাকাছি এসেছি। তার মানে এই নয় আমরা অনেক পাল্টে গেছি। ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ভালো বিজ্ঞাপন তৈরি হচ্ছে এখন। বাকিটা খুবই নিম্নমানের। তবে আশার কথা হচ্ছে, ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। একদিন শতভাগই ভালো মানের বিজ্ঞাপন নির্মাণ হবে।
নির্মাতা পিপলু আর খান বলেন, 'আসলে আমাদের লাইফস্টাইলে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আমাদের চাহিদা বেড়েছে। আগে হয়তো দুই ঈদ কেন্দ্রিক ছিল আমাদের চাহিদা। এখন বছরব্যাপী। আনুষঙ্গিক অন্যান্য জিনিসের প্রতিও আমাদের চাহিদা বেড়েছে। ফলে মানুষ আধুনিক হচ্ছে। আর এই আধুনিক জনগোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করতে আধুনিক বিজ্ঞাপন প্রয়োজন। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এখন প্রচুর তরুণ-তরুণী বিজ্ঞাপনে কাজ করছে। তাই পরিবর্তনটাও দ্রুত হচ্ছে।'
বিজ্ঞাপন সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন দ্রুত বিশ্বে সুনামের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সেই স্বপ্ন নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন তারা।