শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
নিম্নমানের ৫২ পণ্য

যাদের নিয়ে গর্ববোধ করি তারাই ভেজাল খাওয়ায় : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের নামিদামি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্যে ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে- এমন খবরে উষ্মা প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। আদালত বলেছে, ‘যেসব নামকরা প্রতিষ্ঠান বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে, আমরা যাদের নিয়ে প্রাউড ফিল (গর্ববোধ করি) করি অথচ তারা আমাদের ভেজাল খাওয়ায়!’

গতকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি নি¤œমানের পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার এবং জব্দের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেছে। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা কনজ্যুমার সোসাইটি জনস্বার্থে রিট আবেদনটি দায়ের করে। পরে আদেশে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানহীন ৫২ পণ্যের তদারকি করে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তারা কী কী বিষয়ে কাজ করেন- এর ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালকের নিচে নয়- এমন দুজন কর্মকর্তাকে হাই কোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে আদালত। আগামী ১২ মে তাদের দুজনকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সংগঠনের আইন উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেসুর রহমান। এ সময় আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলে, আজ (বৃহস্পতিবার) লিখিত কোনো আদেশ দিচ্ছি না, আপনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দুজনকে আসতে বলেন, আমরা দেখব তারা কে কোন বিষয়ে কাজ করছেন। আদালত আরও বলে, ভেজাল পণ্য নিয়ে কাজ করা সরকারের কাজ। আমরা আদালত মামলা পরিচালনা করব। তারপরও প্রত্যেক সপ্তাহে একটার পর একটা ভেজাল নিয়ে আদালতের কাছে এলে আমরা কী করব? বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কর্তৃক ৫২টি পণ্য মানহীন উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করার পরও এসব পণ্যে উৎপাদনকারী কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নোটিস ছাড়া কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় রিট করেন ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি (সিসিএস)। বৃহস্পতিবার সকালে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় করা রিটে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের পরীক্ষায় ৫২টি প্রতিষ্ঠানের মানহীন ও নিম্নমানের পণ্য জব্দ এবং এসব পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পণ্যের গুণগত মান উন্নত না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।

বিএসটিআইয়ের কার্যক্রমে হাই কোর্টের অসন্তোষ : খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে বিএসটিআইয়ের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে নিরাপদ দুধ নিশ্চিত করতে বিএসটিআইয়ের কাউন্সিল ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাউন্সিলের কার্যপরিধি কী তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

পাস্তুরিত তরল দুধের মাননিয়ন্ত্রণ নিয়ে দায়ের করা এক রিটের শুনানিতে গতকাল বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারীর আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. রাশিদুল হাসান এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম। পরে রিটকারীর আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ জানান, আদালত বিএসটিআই ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের কাউন্সিলের কাজের মধ্যে কোনো সমন্বয় আছে কিনা এবং তাদের বোর্ড মিটিংগুলো কীভাবে হয়, এসব তথ্যও জানতে চেয়েছে আদালত। এ বিষয়ে শুনানির জন্য ২৪ জুন পরবর্তী দিন ঠিক করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর