রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
ইকোনমিস্টের নিবন্ধ

সহসা কমবে না করোনা, মানুষকে মানিয়ে নিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বজুড়ে চলা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সহসা কমে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে। এর মধ্যেই মানুষকে মানিয়ে নিয়ে বাঁচতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরে ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের এক নিবন্ধে এ কথা বলা হয়েছে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষণা প্রতিবেদন উল্লেখ করে ইকোনমিস্টের নিবন্ধে বলা হয়েছে, উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি না এলে ২০২১ সালের মাঝামাঝি করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২০-৬০ কোটিতে। এ সময়ের মধ্যে মারা যেতে পারে ১৪-৩৭ লাখ মানুষ। ওই সময়ও বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।

ইকোনমিস্টের নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ এখনো শুরু হয়নি। বিশ্বে এক কোটির বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বিশ্বের সবখানে। চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনামের মতো কিছু দেশ মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনলেও  লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো ভাইরাসের তা-ব চলছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশে এখনো নিয়ন্ত্রণহীন। আফ্রিকার দেশগুলো রয়েছে মহামারীর প্রাথমিক পর্যায়ে, ইউরোপ আছে এগুলোর মাঝামাঝি কোনো অবস্থানে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্যে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে এক দিনে ২ হাজার ১১৫ জন করোনা রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল। ২৮ জুন এক দিনে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজারের বেশি। অর্থাৎ ওইদিন প্রতি ৯০ মিনিটে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ ফেব্রুয়ারি সারা দিন শনাক্তের সমান। আরও ভয়াবহ দিন সামনে। ৮৪টি দেশের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি নতুন রোগী শনাক্তের বিপরীতে আক্রান্ত ১২ জন অশনাক্তই থেকে যাচ্ছে, করোনায় প্রতি দুই মৃত্যুর বিপরীতে তৃতীয়টিকে অন্য রোগের ফলাফল বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যাপক হারে করোনা ভ্যাকসিন ব্যবহার এখনো সম্ভব হয়নি। শুধু প্রাথমিক থেরাপিগুলো পাওয়া যাচ্ছে। মহামারী পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে অর্থনীতিও। যদিও এখনো বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা বেশ নাজুক। জে পি মর্গান ব্যাংকের পরিচালিত জরিপে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৩৯টি দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১০ শতাংশ হ্রাস পাবে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিকল্প উপায়ে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে নিয়েছে। বিভিন্ন কলকারখানা কর্মীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে এবং কর্মঘণ্টা পুনর্বণ্টন করে পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দেশব্যাপী লকডাউন তুলে দিলেও বিভিন্ন দেশ বাইরে বড় ধরনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করে স্কুল-কলেজ ও দোকানপাট চালুর অনুমতি দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্য কড়াকড়ি একটু দ্রুত তুলে নেওয়ায় সংক্রমণ ফের বেড়েছে। ফলে আবারও বিধিনিষেধ ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে তারা। সামাজিক রীতিনীতি বদলে দেওয়া সহজ নয়। এ জন্য দরকার জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ এবং বিশ্বাস স্থাপন। সব কথার শেষ কথা, করোনাভাইরাস এত শিগগিরই যাচ্ছে না। আরও বহু মানুষ এতে আক্রান্ত হবে, মারাও যাবে অনেকে। মনে রাখতে হবে, আপনার হয়তো করোনাভাইরাস মহামারীর ওপর আগ্রহ কমে গেছে, কিন্তু আপনার ওপর করোনার আগ্রহ মোটেও কমেনি।

সর্বশেষ খবর