সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

৯ ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে অসুস্থ সন্তান নিয়ে হাসপাতালে বাবা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

৯ ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে অসুস্থ সন্তান নিয়ে হাসপাতালে বাবা

সাত মাস বয়সী শিশু কন্যা জান্নাত গত মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতেই বাবা তারেক ইসলাম ঠাকুরগাঁও সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করান। এক দিন চিকিৎসা দিয়েই উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশু জান্নাতকে রংপুরে রেফার্ড করেন চিকিৎসক। কিন্তু চলমান কঠোর লকডাউন পরিস্থিতিতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে দিশাহারা হয়ে পড়েন রিকশাচালক বাবা। চার দিন ধরে কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে গতকাল নিজে রিকশা চালিয়ে সন্তানকে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছেন তিনি। শনিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রায় ১১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিকাল সোয়া ৩টায় রংপুর পৌঁছেন। তারেক ইসলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিণ সালন্দর গ্রামের রামবাবুর গোডাউন এলাকার আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে। জানা যায়, তারেক রিকশা চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিলে সাউন্ড সিস্টেম অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু কভিড-১৯ ও কঠোর লকডাউন শুরুর পর থেকে অনুষ্ঠান না থাকায় তার বাড়তি আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউন পরিস্থিতিতে রিকশা চালাতে না পেরে অসহনীয় কষ্ট  নেমে আসে পরিবারটির ওপর। তারেক জানান, শুক্রবার রাতে হাসপাতাল থেকে বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ি যাই। কিন্তু বাড়িতে আসার পর বাচ্চার অবস্থা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ি। কিন্তু লকডাউনের কারণে আমার অবস্থা এতটাই খারাপ যে, আগামীকাল কি খেয়ে বেঁচে থাকব সে ব্যবস্থাও আমার নেই। এ অবস্থায় আমি কীভাবে শিশু বাচ্চাকে নিয়ে এত দূরের রাস্তা যাব ভেবে পাচ্ছিলাম না। যখন অ্যাম্বুলেন্সের টাকা জোগাড় করতে পারলাম না। তখন রিকশা চালিয়ে রংপুরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তিনি আরও বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজের শিশু ওয়ার্ডে শিশু জান্নাতকে ভর্তি করা হলে চিকিৎসক  দেখার পর প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র লিখে দেন। অপারেশন করতে হতে পারে বলে জানান চিকিৎসক। কিন্তু অপারেশন করার মতো টাকা আমার কাছে নেই। এমনকি চিকিৎসকের লিখে দেওয়া প্রাথমিক পর্যায়ের ওষুধ, স্যালাইন, ইনজেকশন ক্রয়ের কোনো টাকাও নেই। এখন কি করব আল্লাহ ছাড়া  কোনো উপায় দেখছি না বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর