মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
আপিল বিভাগের মন্তব্য

কৃষকের কোমরে দড়ি, কিছু হয় না লক্ষ-কোটি টাকা খেলাপির

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যেতে পারেন, অথচ যাদের কাছে লাখো-কোটি টাকা পাওনা, তাদের কিছু হয় না- ব্র্যাক ব্যাংককে উদ্দেশ করে এসব কথা বলেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না- মর্মে হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের শুনানিকালে গতকাল তিনি এ মন্তব্য করেন।

ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না- এমন নির্দেশনা দিয়ে ২৩ নভেম্বর রায় দেন হাই কোর্ট। এই রায়ের পাঁচ দিনের মাথায় রায়টি স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক। গতকাল চেম্বার জজ আদালতে সেটি শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী (অ্যাটর্নি জেনারেল) এ এম আমিন উদ্দিন। বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল্লা আল বাকী। শুনানির শুরুতে ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিষয়। হাই কোর্ট রায় দিয়ে বলেছেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে না। নিম্ন আদালতে এ সংক্রান্ত বিচারাধীন সব মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। তখন চেম্বার বিচারপতি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় না দেখে এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলা যাবে না। আদালত এ সময় ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা ২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ যাদের কাছে লাখো-কোটি টাকা পাওনা, তাদের কিছু হয় না। ঋণ দেওয়ার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া ব্ল্যাঙ্ক চেকের বিষয়ে চেম্বার বিচারপতি বলেন, এই চেকে কে স্বাক্ষর করে, কে টাকার অঙ্ক বসায়, কে কলাম পূরণ করে তার কোনো হদিস নেই। এই চেক নেওয়া যাবে না, বলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তারপরও ব্যাংকগুলো কেন মানছে না? তখন আইনজীবী আমিন উদ্দিন চেম্বার বিচারপতির কাছে হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে বলেন, হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দরকার। নইলে ঋণের টাকা আদায় করা যাবে না। তখন চেম্বার বিচারপতি আইনজীবীর কাছে এ সংক্রান্ত উদাহরণ দেখতে চাইলে তা দেখাতে ব্যর্থ হন ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী। পরে চেম্বার আদালত ১ ডিসেম্বর শুনানির তারিখ রেখে ব্র্যাক ব্যাংকের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

সর্বশেষ খবর