মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

জনগণের প্রতিনিধি ক্ষমতায় বলেই এত উন্নয়ন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনগণের প্রতিনিধি ক্ষমতায় বলেই এত উন্নয়ন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র ছিল বলেই উন্নয়নগুলো সম্ভব হয়েছে। জনগণের প্রতিনিধি রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে বলেই এত উন্নয়ন হচ্ছে। এ ধারা না থাকলে এত উন্নত হতো না। আমাদের ভোট দিয়ে ২০১৪ সালে নির্বাচিত করেছে জনগণ। ২০১৮ সালে ভোট দিয়ে আবার নির্বাচিত করেছে। এর একমাত্র কারণ আমরা তাদের উন্নয়নে কাজ করেছি। কাজেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়, এটাই বাস্তবতা। গতকাল সকালে রাজধানীর রমনা পার্কে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও রাজউকের ১২টি প্রকল্প উদ্বোধনে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পরমাণু শক্তিতে যুক্ত হতে পেরেছি। এ পরমাণু দিয়ে আমরা বোমা বানাব না, বিদ্যুৎ উৎপাদন করব। তিনি বলেন, ২০২৩ সাল হবে মন্দার বছর- অর্থনীতিবিদরা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। দেশে যেন এর ধাক্কা না লাগে, সেজন্য এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। উন্নত দেশগুলো যখন হিমশিম খাচ্ছে, তার পরও আমাদের অর্থনীতির গতিধারা অব্যাহত রেখেছি আমরা। প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগ অর্জন করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। কাজেই দেশ ও দেশের জনগণের জন্য আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। আমরা সেই দায়িত্ববোধ থেকেই দেশ চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তুলব। আমরা ই-গভর্ন্যান্স চালু করব, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করব। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন শুধু আর্থসামাজিক উন্নয়নই নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায়ও আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষম দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে তাঁর সরকার ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো যাতে পূরণ হয়, তার নিশ্চয়তা রেখেই সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।

সরকারপ্রধান বলেন, তাঁর সরকারের উন্নয়ন কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক নয়, বরং একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে আমরা স্যাটেলাইট যুগেও প্রবেশ করেছি। তা ছাড়া ’৯৬ সালে যে বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট, তাকে ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধি করার পর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে দেখি তা আবার ৩ হাজারে (মেগাওয়াট) নেমে গেছে। সেখান থেকে আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ঘরকে আমরা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করতে পেরেছি। প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা মানুষকে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। পাশাপাশি মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। প্রধানমন্ত্রী করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানির ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ইংল্যান্ডে প্রায় দেড় শ ভাগ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমন অবস্থা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কাজেই এখানেও আমি সবাইকে অনুরোধ করব বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাই আবার একটু সাশ্রয়ী হবেন।

তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের খাবার উৎপাদন বাড়াই তবে অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের আঘাত করতে পারবে না। তিনি বলেন, সরকারের বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো জিডিপিতে গড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সফলভাবে চলছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর যিনি সেনাপ্রধান হলেন, তিনিই একদিন নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিলেন। এই ঘোষিত রাষ্ট্রপতি, অনির্বাচিত লোক দিয়ে কখনো দেশের উন্নতি হয় না, এটা প্রমাণিত সত্য। ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেছি। জনগণের উন্নয়ন অন্তত আমরা করতে পেরেছিলাম। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সাক্ষরতার হার, খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম। তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন করি। আমাদের যে পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যাই। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। যদি এই ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ধারা না থাকত তাহলে এ দেশ কিন্তু এত উন্নত হতে পারত না।

উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-

গণপূর্ত অধিদফতরের প্রকল্প : ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য ২০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ (৯০টি ফ্ল্যাট), তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (ছয়টি ১৩ তলা ভবনে ২৮৮টি ফ্ল্যাট), মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট, নোয়াখালী সদরে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ (নয়টি ১০ তলা ভবনে ৩২৪টি ফ্ল্যাট)।

এ ছাড়া রয়েছে ঢাকার রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার লাইব্রেরি ভবন, এনেক্স ভবন, অডিটোরিয়াম নবায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজ।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের প্রকল্প : মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ১ হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট (স্বপ্ননগর-১) নির্মাণ, মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনে ১৪ তলাবিশিষ্ট ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের ১০০ ফ্ল্যাট নির্মাণ ও সিলেটের সুনামগঞ্জে সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন।

রাজউকের প্রকল্প : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) ও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রগতি উচ্চবিদ্যালয় ভবন, পলখান উচ্চবিদ্যালয় ও পূর্বাচল আদর্শ কলেজ ভবন।

সর্বশেষ খবর