বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
১৪ দেশের দূতাবাস

সাংবাদিকদের ভীতি ছাড়াই কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্ত এবং স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর মাধ্যমে নাগরিকরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের তথ্য জানার পাশাপাশি তাদের নেতাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারেন। স্বাধীন গণমাধ্যমের অধিকারের বিষয়টি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার দলিলের পাশাপাশি বাংলাদেশসহ অনেক দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গতকাল বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সদস্যদেশগুলোর বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে সই করেছে বাংলাদেশে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মে মাসের ৩ তারিখকে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই দিনে মুক্ত গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা উদযাপনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করার অঙ্গীকার এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গকারী সাংবাদিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গৃহীত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ঘোষণাপত্রের ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেকেরই মতামত পোষণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া অবাধে মতামত পোষণ করা এবং রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে যে কোনো মাধ্যমের মারফতে তথ্য ও ধারণাগুলো জানা বা অনুসন্ধান, গ্রহণ ও বিতরণ করা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার মূল্যবোধকে সম্মিলিতভাবে সমুন্নত রাখি। সাংবাদিকদের অবশ্যই হয়রানি, ভীতি বা সহিংসতার ভয় ছাড়াই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে আরও এক ধাপ পেছাল বাংলাদেশ : সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক বৈশ্বিক ২০২৩-এর সূচকে এক ধাপ নিচে নেমেছে বাংলাদেশের অবস্থান। সূচকে থাকা ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩তম। প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার গতকাল বার্ষিক এ সূচক প্রকাশ করেছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।

সূচক অনুযায়ী, এ বছরে ৩৫.৩১ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ, যেখানে গত বছর ৩৬.৬৩ স্কোর নিয়ে এক ধাপ ওপরে ছিল। সূচকে ২০২১ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫২তম। এ ছাড়া আরএসএফ-এর সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশগুলোর অবস্থান নিচের দিকে। সূচকে ভারতের অবস্থান ১৬১, আর পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানের অবস্থান ১৫০তম। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে ১১ ধাপ উন্নতি হয়েছে শ্রীলঙ্কার। তালিকায় দেশটির অবস্থান ১৩৫তম। ভুটানের অবস্থান ৯০তম, নেপাল ৯৫, তালিকায় ১৫২তম অবস্থানে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান।

অন্যান্য বারের মতো তালিকার সবচেয়ে নিচের অবস্থানে আছে উত্তর কোরিয়া। দেশটিতে সংবাদ প্রকাশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে সরকার। দ্য ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের তথ্যে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর খড়গের মাত্রা বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। এতে প্রকৃত সংবাদ প্রকাশে অনেকটা চাপের মুখে আছে মিডিয়াগুলো। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, অপপ্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সবমিলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। তথ্যে বিশ্বের ৩১টি দেশের পরিস্থিতিকে গুরুতর হিসেবে দেখানো হয়েছে। স্বৈরাচারী শাসকের অধীনে থাকা দেশগুলোতে সংবাদমাধ্যমে দমন-পীড়নের মাত্রা অনেক বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরএসএফ বলছে, সাংবাদিকতায় ১০টি দেশের মধ্যে সাতটি দেশের পরিস্থিতি কাজের জন্য অনুপযুক্ত। ১০টির মধ্যে তিনটিকে সন্তোষজক বলা হয়েছে।

২০২৩-এর সংস্থাটির সূচকে ৯৫.১৮ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে নরওয়ে। পরের অবস্থানে আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও লিথুয়ানিয়া। সূচকে সবচেয়ে নিচে রয়েছে উত্তর কোরিয়া (১৮০)। নিচের দিকে দেশগুলো হলো যথাক্রমে উত্তর কোরিয়ার পরে চীন (১৭৯) ও ভিয়েতনাম (১৭৮), ইরান (১৭৭)। এবারের সূচকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪৫তম। মিয়ানমার, তুরস্ক, রাশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের সংবাদমাধ্যমে দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে সরকারগুলো। সূচকে আফ্রিকার দেশগুলোর সংবাদমাধ্যমের পরিস্থিতিকে খুবই নাজুক হিসেবে উঠে এসেছে।

 

সর্বশেষ খবর