বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করুন, অন্যথায় দেশে আবারও রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে চান, আপনারা সমর্থন করেন কিনা?’ এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে আমাদের সমর্থন করার ব্যাপার না। যখনই প্রেসিডেন্ট আমাদের কাছে প্রস্তাব দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামের জন্য আমরা সেই সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম দেব। তবে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও বেগম সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আজ দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠেয় এ সমাবেশে প্রধান অতিথি (ভার্চুয়ালি) থাকবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে নির্দলীয় সরকার গঠনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আমি রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, কাল বিলম্ব না করে আপনি আজকের মধ্যে দয়া করে অবিলম্বে এই সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন। এখন কনস্টিটিউশনাল হেড অব স্টেট প্রেসিডেন্ট। তিনি হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রধান, তারই একমাত্র এখতিয়ার আছে এই ধরনের ব্যবস্থাগুলো নেওয়ার। সুতরাং যখন রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে ডাকবেন তখনই আমাদের পক্ষ থেকে নামের প্রস্তাব আমরা দেব। তবে একটা কথা বলে দেই, ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। তাদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মবোধ করেছি। সর্বদলীয় ব্যাপারটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত যে জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দোতলার একটি কক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে সশরীরে মহাসচিবসহ পাঁচজন সদস্য ছিলেন। বিদেশে অবস্থান করা ড. আবদুল মঈন খান, সালাউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
আপনারা কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো নাম স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে স্থির করেছেন? জবাবে তিনি ‘না’ সূচক উত্তর দেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি আজকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে। শুভেচ্ছা জানাচ্ছি একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রত্যাশায় এবং একই সঙ্গে আপানাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আপনারা এই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করেছেন। তবে এই বিজয়ের পরে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারী কয়েকটি টিভি সেন্টারে অগ্নিসংযোগ করেছে, ভাঙচুর করেছে। এটা মুক্ত স্বাধীনতা ও স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। এজন্যে দুঃখপ্রকাশ করছি। আমরা সবসময় ফ্রিডম অব প্রেসে বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি ব্যক্তি, মানুষ, সংগঠন বিশেষ করে সাংবাদিকরা তারা তাদের মতো একদম স্বাধীনভাবে প্রকাশ করবেন। সেই বিশ্বাসে আমরা মনে করি যে, যারা এই সমস্ত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকেছেন তারা এসব থেকে বিরত থাকবেন এবং সংবাদপত্রের যে মুক্ত ধারা তা অব্যাহত রাখবেন।
ফখরুল বলেন, আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছিয়ে দিতে চাই যে, এখন এরোগেন্টস, রেজিয়েন্স-এর কোনো স্থান নেই। স্থান নেই কোনো প্রতিহিংসা, কোনো প্রতিশোধ গ্রহণের। এখন যেটা প্রয়োজন ধৈর্যের সঙ্গে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এই অর্জিত স্বাধীনতাকে সুসংহত করা। এখনো যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিশোধমূলকভাবে অগ্নিসংযোগ করছেন, লুটপাট করছেন, বাড়িঘরে হামলা করছেন, দয়া করে এটা এই মুহূর্ত থেকে বন্ধ করুন। যারা এটা করছেন তারা কেউ আন্দোলনের লোক নয়। যারা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে তাদের লোকেরা এসব করছে। এ বিষয়গুলো সবার মনে রাখতে হবে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত হতে বল। এখানে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি যেন না হয়- যাতে অর্জিত বিজয় কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এই বিজয় যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে- সেজন্য তিনি জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
বেগম খালেদা জিয়া কবে নাগাদ জনসমক্ষে আসবেন? এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন, ম্যাডাম খুবই অসুস্থ। আমি সোমবার রাতে দেখা করেছি। সুতরাং যখনই তিনি ফিট মনে করবেন, সুস্থ বোধ করবেন তখনই তিনি জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন।
‘তারেক রহমান কবে ফিরবেন’- এ প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি (তারেক রহমান) যখনই মনে করবেন- ‘হি ক্যান কাম ব্যাক’- আমরা অলরেডি অনুরোধ জানিয়েছি যে, দ্রুত চলে আসেন। সেই ব্যবস্থা হবে ইনশা আল্লাহ।