জাতীয় শোক দিবস কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ১৫ আগস্টের এ দিনটিকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কা করছেন সংগঠনটির সমন্বয়করা। দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়ে ক্ষমতা দখলের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে ওইদিন রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
১৫ আগস্ট কেন্দ্র করে চার দফা দাবির পাশাপাশি ছাত্রদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী সর্বদলীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত টাইমলাইনে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান। চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ১৫ আগস্টের আগেই পুলিশকে পুনর্গঠন করে দেশের প্রতিটি থানায় পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সারা দেশে র্যাব, বিজিবি ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা, দেশের সর্বত্র সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং যেসব ব্যক্তি শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালিয়েছে বা বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আজকের মধ্যে মামলা দায়ের করে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করা। চার দফা দাবি উত্থাপনের পূর্বে মোসাদ্দেক আলী বলেন, ৫ আগস্টের বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের আস্তানা ও কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে ভারত সরকার সম্পূর্ণরূপে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ বা সাম্প্রদায়িক রূপে দেখিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কতিপয় আওয়ামীপন্থি হিন্দুদের নেতৃত্বে রাজধানীর শাহবাগসহ সারা দেশে বিক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উপরন্তু শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব এখন হুমকির সম্মুখীন। ১৫ আগস্ট কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সারা দেশে শোডাউন ও জমায়েতের মধ্য দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, বর্তমানে থানাগুলোতে সক্রিয় পুলিশ প্রশাসন না থাকায় হিন্দুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে মাঠে নামিয়ে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার এমনকি সম্ভব হলে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর একটি অংশের সহযোগিতায় পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের যৌথ প্রচেষ্টা চালাবে ভারত সরকার ও আওয়ামী লীগ। ১৫ আগস্টের এ ষড়যন্ত্র রুখতে সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বদলীয় প্রতিরোধ গড়ে তুলে আগামী কয়েকদিন ঢাকাসহ সারা বাংলার রাজপথ দখলে রাখার আহ্বান জানান এই সমন্বয়ক। এদিকে আরেক সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ১৫ আগস্ট কেন্দ্র করে জুলাই-আগস্ট হত্যাকান্ডের হুকুমের আসামিরা ফিরে আসার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে ছাত্র-জনতাকে রাজপথে থাকতে হবে। গতকাল ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান। এদিকে শেখ হাসিনাসহ ছাত্র আন্দোলনে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিচার এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দখলদারিত্বের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল ঢাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, আমরা সর্বশক্তি দিয়ে হাসিনার সব ষড়যন্ত্রকে রুখে দেব। পরাজিত শক্তি আওয়ামী লীগ নানা কূটকৌশল আঁকছে। আমরা ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই তাদের ১৫ আগস্টের ক্যু করার পরিকল্পনা সফল হতে দেব না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, আওয়ামী সরকারের প্রেতাত্মারা এখনো সক্রিয়। ভারতীয় দালালদের সব ষড়যন্ত্র ও প্রতিবিপ্লব রুখে দিতে হবে। বিপ্লবকে সুসংহত ও রাষ্ট্রের পুনর্গঠন নিশ্চিত করার আগে ছাত্র-জনতা রাজপথ ছাড়ছে না।