বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিং করেছেন নতুন দায়িত্ব নেওয়া পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তিনি বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন। ব্রিফিংয়ে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনারসহ প্রায় ৬৪ জনের মতো কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান করলে দিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। কূটনীতিকদের ব্রিফের কারণ উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, রাষ্ট্রদূতদের ডাকা হয়েছে। সরকার কোন প্রেক্ষাপটে এসেছে এসব বিষয়ে বলা হয়েছে। আমরা আমাদের উদ্দেশ্য বলেছি। একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা যারা এনেছে তাদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। তাদের চাওয়া কোনো বৈষম্য থাকবে না। এ সরকার এ উদ্দেশ্যে কাজ করছে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছি। তারা এগিয়ে এসেছে। আমরা বলেছি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয়ভাবে যুক্ত হতে চাই। সব ক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ সবার সঙ্গে। রোহিঙ্গা ইস্যু, বিনিয়োগের ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন এসেছে। আমরা বলেছি তারা যেন হতাশ না হয়। এত বড় একটা পরিবর্তন হয়েছে, কিছু তো সময় লাগতে পারে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান করেন আমাদের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, এটা খুব হাইপোথিক্যাল (অনুমানমূলক) প্রশ্ন। একজন যদি কোনো এক দেশে গিয়ে থাকেন তাহলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে কেন? তার তো কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় বিষয় কিন্তু অনেক বড় বিষয়। এটা স্বার্থের সম্পর্ক। বন্ধুত্বটা কিন্তু স্বার্থের সম্পর্ক। দুই পক্ষের স্বার্থ আছে, ভারতের স্বার্থ আছে; ভারতে আমাদের স্বার্থ আছে। কাজেই আমরা সেই স্বার্থকে অনুসরণ করব। আমাদের সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা থাকতে হবে। ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। কূটনীতিকদের কেউ আক্রান্ত হননি। তাঁদের চ্যানসারি, রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে সিকিউরিটি নেই। এটা আমি তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছি যে, এক থেকে দুই দিনের মধ্যে অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাবে, যেহেতু পুলিশ রাস্তায় নামা শুরু করেছে। তৌহিদ হোসেন বলেন, একজন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, যুবকরা এত বড় একটা কাজ করল আগামীতে যেন যুবকদের মধ্যে একটা নেতৃত্ব আসে। আমি বলেছি, দুজন ছাত্র কাউন্সিলে আছে। তাদের অনেকের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন ছিল। আমরা বলেছি, মানবাধিকার নিয়ে আমরা সিরিয়াস। উপদেষ্টা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন আসেনি। নির্বাচনের বিষয়ে একটি শব্দও হয়নি। আমি পরিষ্কার করে দিয়েছি বিষয়টা। এ সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করে ক্ষমতা হস্তান্তর। এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তিনি বলেন, আমরা সময়ের ব্যাপারে বলছি না। ছাত্ররা কি আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার জন্য জীবন দিয়েছে? তাদের কিছু চাওয়া আছে। কিছু রিফর্মের প্রয়োজন পড়বে। আমরা যেটুকু সময়ের প্রয়োজন পড়বে ঠিক সেই সময়টুকু, বেশি থাকব না, কমও থাকব না। রিফর্মগুলো অন্তত পথে এনে দিয়ে যেতে হবে। সবকিছু কেউ করে দিয়ে যেতে পারবে না। ছাত্রদের যে চাওয়া সেটা যেন পথে এনে দিয়ে যাওয়া যায়। বিদায়ি সরকারের পরিকল্পনায় থাকা বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন এনগেজমেন্ট আটকে যাওয়ার প্রশ্নে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ঠিক এ মুহূর্তে আমরা কিন্তু কোনো কিছু থেকে সরে যাব এমন না। যার সঙ্গে যে চুক্তি আছে বা কমিটমেন্ট আছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বা দ্বিপক্ষীয় ব্যাপারে সেগুলো কিন্তু যে কমিটমেন্ট বাংলাদেশ করেছে অবশ্যই আমাদের রক্ষা করতে হবে। যেখানে আমাদের মনে হয় স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে সেখানে আমাদের স্বার্থ দেখা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কোনো দেশের হাতে আছে কি না-এমন প্রশ্ন করা হয় তৌহিদ হোসেনকে। জবাবে তিনি বলেন, বাইরের কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। যে কাউন্সিল এখন দায়িত্বে আছে আমি কিন্তু এটাকে ক্ষমতার সরকারের মতো একেবারে ব্যবহার করতে চাই না। এটা একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন করে আমরা সরে যাব, এ হলো কথা।