ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের সহায়তার জন্য গঠিত ‘জুলাই শহীদস্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ত্রাণ তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এক সপ্তাহের মধ্যে আহতদের আর্থিক সহায়তা শুরু হবে এবং পরবর্তীতে এককালীন ও মাসিক হিসেবে আর্থিক সহায়তা করা হবে বলে জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, জুলাই শহীদস্মৃতি ফাউন্ডেশন নিয়ে সাতটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি উদ্যোগ হচ্ছে, যারা অর্থ সংকটে ভুগছেন তাদের জরুরি আর্থিক সহায়তা, এককালীন একটি ভাতা ও মাসিক ভাতা দেওয়া হবে। এটা এই সপ্তাহেই আমরা শুরু করব।
নাহিদ ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রায় ৮০০ নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭০০ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে। সব পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ শেষ হলে স্মরণসভা করা হবে।
ফাউন্ডেশনের প্রতি সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আজ (গতকাল) সরকারের পক্ষ থেকে চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। মানুষের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা এই ফাউন্ডেশনে অনুদান দেবেন।
এর আগে বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তাঁর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকার চেক তুলে দেন আন্দোলনে নিহত মুগ্ধর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধর হাতে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি এবং আন্দোলনে নিহত মুগ্ধর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে সেক্রেটারি (সম্পাদক) করে সাত সদস্যের ‘জুলাই শহীদস্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়।
আরও ২০০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক : অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরে আরও ২০০ কোটি ডলার নতুন ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই অর্থ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, বন্যা মোকাবিলা, বায়ুর গুণমান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হবে।
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক এই নতুন ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা দেশ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রযুক্তিসহায়তা চান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ঢাকার যানজট নিরসনে ‘দ্রুত ও কার্যকরী সমাধান’ খোঁজার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার : দেশীয় অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রাজধানী ঢাকার যানজটের সমস্যা নিরসনে পুলিশ ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, যানজটের চাপ কমাতে হবে। খুব দ্রুতই আমাদের একটা সমাধান বের করতে হবে।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর দুজন নগর ট্রাফিক ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন। ডিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের তাঁদের ছাত্রদের সাহায্য নিয়ে অন্তত একটি ট্রাফিক করিডরে যানজট কমানোর দেশীয় সমাধান খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। স্থানীয় দক্ষতা বা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ট্রাফিক সিগন্যালের ব্যবস্থাও ঠিকঠাক করতে বলা হয় তাঁদের।
এ সময় যানজট নিরসনের কিছু পাইলট বা পরীক্ষামূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় ট্রাফিক পুলিশকে। যেমন ছোট স্টপেজগুলোতে বাস থামানোর সময়কে ২-৩টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় দুই মিনিটের কম সময় সীমাবদ্ধ করা এবং পরবর্তীতে শহরের অন্যান্য রাস্তায়ও এ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা।
প্রায় ২ কোটি অধিবাসীর মহানগরী ঢাকায় ডিএমপিকে যানজট নিরসনের দ্রুত ও কার্যকরী উপায় খুঁজে বের করতে বলেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে একটি প্রেজেন্টেশন দেন বুয়েটের পরিবহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, শুধু ঢাকা শহরে যানজটের কারণে প্রতি বছর অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) নাজমুল হাসান বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আরও ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করার পর ট্রাফিক পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ সম্পূর্ণ মোতায়েন আশা করা হচ্ছে।
বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল হাফিজ, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান এবং ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ফারুক আহমেদ।