আওয়ামী লীগ আমলের বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম ও ব্যত্যয় চিহ্নিত করবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। সে অনুযায়ী নির্বাচনি অনিয়ম ঠেকানোর বিষয়ে সুপারিশ করবে এ কমিশন। এজন্য কমিশনের সদস্যরা বর্তমান নির্বাচনি আইন-বিধি পর্যালোচনা করছে। এ ছাড়া নির্বাচন অনিয়ম নিয়ে ইসির কাছে আসা সব ধরনের অভিযোগ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নির্বাচন সংস্কারের পরামর্শ নিতে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে আলাদা বৈঠক করার পরিকল্পনা আছে সংস্কার কমিশনের। আগামী ১১ নভেম্বর একজন সাবেক সিইসির সঙ্গে বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। পরে অন্য দুজনের সঙ্গে বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া কমিশন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছেও নির্বাচন সংস্কারের বিষয়ে লিখিত পরামর্শ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের টেবিলে ৫০০ এর বেশি সুপারিশ জমা পড়েছে। ৬টি বিষয়ে বেশি মতামত দিয়েছেন নাগরিকরা। আগামী ১৫ নভেম্বর সুপারিশ বা মতামত দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। তবে কমিশন মতামত দেওয়ার সময় বাড়ানোর চিন্তা করছে।
বিগত তিন নির্বাচনের পর্যালোচনার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, অবশ্যই নির্বাচনে যেসব আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে; অনিয়ম ঘটেছে, এগুলো আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করব। এবং এতে ভালো কিছু হয়ে থাকলে সেগুলোও আমরা চিহ্নিত করব। নির্বাচনি প্রক্রিয়াটা এক দিনের বিষয় নয়। এটা একটা নির্বাচনি সাইকেল। এই সাইকেলে কী কী ঘটেছে এগুলো আমরা পর্যালোচনা করার চেষ্টা করব। এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি যেগুলো ঘটেছে; সেগুলো আমরা চিহ্নিত করে সেগুলোর ব্যাপারে সুপারিশ করব। সূত্র জানিয়েছে, কমিশন ইতোমধ্যে ১৪টি বৈঠক করেছে। ইমেইলে ১০৯টি মতামত এসেছে। ওয়েবসাইটে ১৮৫; ফেসবুক পেজে ১৮২ এবং ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে মতামত এসেছে ৪৬টি। এর মধ্যে ৬টি বিষয়ে বেশি মতামত দিয়েছেন নাগরিকরা। এর মধ্যে নির্বাচন পদ্ধতি; সংবিধান ও নির্বাচনি আইনি কাঠামো; প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা; নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, ক্ষমতা এবং সার্বিক বিষয়; ভোটের স্বচ্ছতা; নির্বাচনে সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার বিষয়ে বেশি মতামত দিয়েছেন নাগরিকরা। এসব মতামত গত ২২ অক্টোবর খেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত দিয়েছেন নাগরিকরা।
এ বিষয়ে নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে ব্যাপক সারা পাচ্ছি। মতামত দেওয়ার সময় হয়তো আমরা বাড়াতে পারি। কারণে যত মানুষ মতামত দেবেন; ততই ভালো। আমরা রাজনৈতিক দলসহ সব নাগরিকের কাছেই লিখিত সুপারিশ চাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা ৫০০ এর বেশি সুপারিশ পেয়েছি; আরও পাব। অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিদ্যমান নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে মতামত চেয়ে গত ২২ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি জারি করে সংস্কার কমিশন। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আগ্রহী ব্যক্তিদের এই সংস্কার কাজের জন্য পরামর্শ, মতামত ও প্রস্তাবনা মতামত পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদারের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার গত ৩ অক্টোবর ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’ গঠন করে। ৯০ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে আট সদস্যের এই কমিশনের।