সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের সবাই এখন আসামি। হত্যা, গুম, খুন, অর্থ আত্মসাৎ, টাকা পাচার, ভোট জালিয়াতি, রাহাজানি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব অভিযোগে মা-খালার পর ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপকেও ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে। শেখ পরিবারের কেউ দেশে নেই। ভারতে আশ্রিত শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিজের আত্মীয়স্বজনের একটি তালিকা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ফরিদপুরের সদরপুর স্টেডিয়ামের সভায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার দুই ছেলেমেয়ে জয় ও পুতুল, শেখ রেহানার তিন ছেলেমেয়ে ববি, টিউলিপ ও রূপন্তী এবং তাদের ছেলে-মেয়ের বাইরে আমার কোনো আত্মীয় নেই।’ এরপর জুলাই বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। আন্দোলনের মুখে শত শত রাবার বুলেট, গুলির আঘাতে ছাত্র-জনতার বুক রক্তাক্ত করে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরাচারী শাসক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খুন, গুম ও গণহত্যা নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। গত বছরের ১৩ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় প্রথম হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। কোটা আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে মুদি দোকানি আবু সায়েদকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জুলাই ছাত্র আন্দোলনের গণ আন্দোলন ঠেকাতে গিয়ে হুকুমদাতা, অর্থদাতা এবং পরিকল্পনাকারী হিসাবে আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তাঁর বোন শেখ রেহানা, ভাগনে রাদওয়ান সিদ্দিক মুজিব ববি, টিউলিপ সিদ্দিক, ভাগনি আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে। গতকাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নামে ৫০৫টি মামলা হয়েছে। থানা ও আদালত ছাড়াও আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২৩৫টি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৯ জন নিহত, গুমের শিকার ৭৮ জন, আহত ৪৯, অন্যান্য ১৯ অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতা অপব্যহার ও দুর্নীতির কারণে দুদকে সাত মামলা হয়েছে শেখ হাসিনার নামে। এরপর গত পাঁচ মাসে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় থেকে শুরু করে শেখ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নামে খুন, গুম, অপহরণ, হত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, টাকা পাচার থেকে শুরু করে হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির দায়ে প্রায় ৫০৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, ঢাকার নিম্ন আদালত, সারা দেশের জজ কোর্ট এবং থানাগুলোতে এসব মামলা দায়ের হয়েছে। এগুলোর প্রধান আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এরপর পর্যায়ক্রমে পরিবারের অন্য সদস্যদের মামলার আসামি করা হয়েছে। শেখ রেহানা ও তাঁর সন্তানদের নামে দুদকে ছয় মামলা করা হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে দুর্নীতি, হত্যা, হুকুমদাতা হিসেবে মামলা হয়েছে ২৫৫টি, শেখ রেহানার নামে হত্যা ও হুকুমের আসামি করা হয়েছে ২৪০টি, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে মামলা রয়েছে ২৪০টি, রাদওয়ান সিদ্দিক মুজিব ববির নামে ১৪৫ মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। টিউলিপ সিদ্দিকের নামে ১২৫ মামলা করা হয়েছে। রূপন্তীর নামে ৯৬ মামলা করার তথ্য পাওয়া গেছে।