টাকা চুরির ঘটনা দেখে ফেলায় একে একে দুই খালাকে নৃশংসভাবে খুন করে ১৪ বছর বয়সি ভাগনে। হত্যার পর পোশাক বদলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় সে। পরদিন খালাদের জানাজায়ও অংশ নেয়। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সাইকেল কেনার জন্য খালার অগোচরে তার মানিব্যাগ থেকে ৩ হাজার টাকা চুরি করার সময় তিনি দেখে ফেলেন। ওই সময় ঘটনাটি তার মাকে বলে দিতে চাওয়ায় টেবিলে থাকা ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালাকে, পরে তার চিৎকারে ছুটে আসা ছোট খালাকে ছুরিকাঘাত এবং শিলপুতা দিয়ে হত্যা করে। ডিবি পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ ও পারিপার্শ্বিক তদন্তের ভিত্তিতে শনাক্তের পর তাকে গ্রেপ্তার করেছে। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে দুই খালাকে খুন করার বিষয়টি স্বীকার করেছে সে। গতকাল আদালতে দুই খালাকে খুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে শিশুটি।
যেভাবে হত্যাকাণ্ড : অভিযুক্তের বরাত দিয়ে নাসিরুল ইসলাম বলেন, বড় খালা মরিয়ম বেগমের রুমে টিভির পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে সাইকেল কেনার জন্য ৩ হাজার টাকা চুরি করে শিশুটি। বিষয়টি বড় খালা দেখে ফেললে তাকে বকাবকি করেন। বলেন, ‘তোর স্বভাব ভালো হবে না, তুই চুরি করার জন্য আমার বাসায় আসছিস, তোর মাকে এখনই জানাচ্ছি।’ তখন খালা তার মাকে ফোন দেওয়ার জন্য মোবাইল ফোন খুঁজতে থাকেন। মুহূর্তেই শিশুটি ডাইনিং টেবিলে থাকা লেবু কাটার ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালার পেটে আঘাত করে। বড় খালা রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মারতে উদ্যত হন। এ সময় অভিযুক্ত ভাগনে আবারও আঘাত করে। বড় খালার বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারের শব্দ শুনে সেজো খালা (সুফিয়া বেগম) পেছনের অন্য রুম থেকে এসে তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালান। সে ওই একই চাকু দিয়ে সেজো খালার পেটে আঘাত করলে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। বড় খালা তখনো চিৎকার করছিলেন। তারপর সে রান্নাঘরের চুলার পাশ থেকে শিলপুতা এনে বড় খালার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে। পরে সেজো খালাকেও আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তার দুই খালা।
এরপর সে বাথরুমে গিয়ে হাত ও মুখে লেগে থাকা রক্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। পাশের রুমে গিয়ে টি-শার্ট ও জিনস প্যান্টে রক্ত লেগে থাকায় সেগুলো পরিবর্তন করে খালাতো বোন মিষ্টির একটি জিনস প্যান্ট ও তার ব্যাগে থাকা আরেকটি রঙিন টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে। পরে দরজা বাইরে থেকে তালা আটকে চাবি নিয়ে বের হয়ে শনির আখড়ায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় ওঠে। কিছুদূর যাওয়ার পর বাসার চাবি ও তার পরিহিত ক্যাপ রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। শনির আখড়া পৌঁছার পর চুরি করা ৩ হাজার টাকা থেকে ৪৫০ টাকা দিয়ে অটো ভাড়া দেয় এবং বাকি টাকায় রক্ত লেগে থাকার কারণে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।
তারপর শনির আখড়ায় নেমে আয়শা মার্কেটের (ইস্টার্ন শপিং সেন্টার) তৃতীয় তলার মসজিদের ওয়াশরুমে ঢুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ব্যাগে থাকা সকালে পরিহিত গোলাপি রঙের পাঞ্জাবি পুনরায় পরিধান করে। পাশাপাশি তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভিতর থেকে রক্তমাখা কাপড়গুলো ভেন্টিলেটর দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর বাসার সামনে এসে পাশের পরিত্যক্ত একটি বাড়ির সীমনাপ্রাচীরের ভেতর জুতা ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজের বাসায় চলে যায়। যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম জানান, পরদিন ১০ মে বিকালে তার সেজো খালাকে দাফন করার জন্য তার নানার বাড়ি ঝালকাঠির উদ্দেশে রওনা দেয়। পরে ১১ মে বেলা সাড়ে ৩টায় ডিবি মিরপুর বিভাগের একটি টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যায় জড়িত শিশুকে ঝালকাঠি সদরের নানির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেখানোমতে, ইস্টার্ন শপিং সেন্টারের পাশের স্যুয়ারেজ লাইনের ওপর থেকে নীল রঙের রক্তমাখা টি-শার্ট ও ব্লু কালারের রক্তমাখা দুটি জিনস প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া তার বাসার পাশের নির্জন বাড়িতে ফেলে দেওয়া জুতা জোড়াও উদ্ধার করে ডিবি। এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, এখানে অন্য কারও সংশ্লেষ বা পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।