ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বেলা আড়াইটার দিকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ছিল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ডাকা অসহযোগ আন্দোলন। দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষে প্রাণ হারান শতাধিক ছাত্র-জনতা। ওই দিন বিকালে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। এ অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা লংমার্চ টু ঢাকা এক দিন এগিয়ে ৫ আগস্ট কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তাদের এই লংমার্চ কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা করেন শেখ হাসিনা। ওই দিন কারফিউ জারি করা হয়। শুধু কারফিউ জারি করে ক্ষান্ত হননি, ওই দিন সকালেই তিন বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেন হাসিনা। কিন্তু সেই মিটিংয়ে প্রধানরা জানিয়েছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নামেন আন্দোলনকারীরা। এতে বিপাকে পড়েন তিনি। হাসিনাকে দেশ থেকে পালানোর জন্য তাকে ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা তখন ভাষণ দিতে চাইলেও অপারগতা প্রকাশ করা হয়। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা একটি গাড়িতে করে তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দরে যান। সেখান থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে উড়াল দেয় ভারতের উদ্দেশে। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজটি ঢাকা ছাড়ার সময় একটি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট হিসেবে উড্ডয়ন করে এবং এর ফ্লাইটপথ ও অবস্থান অন্যদের না জানাতে ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেয়। একটি উড়োজাহাজের অবস্থান, নাম, উচ্চতা, গতি এবং স্বয়ংক্রিয় জিওলোকেটার সিস্টেম জানাতে থাকে ট্রান্সপন্ডার। হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় আকাশসীমার কাছাকাছি পৌঁছানোর আগে এর ট্রান্সপন্ডার চালু করা হয়নি বলে বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে জানা যায়। ফ্লাইট প্রোগ্রেস স্ট্রিপ অনুযায়ী, হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ৫ আগস্ট বিকাল ৩টা ৯ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পশ্চিমে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এয়ারবেস থেকে উড্ডয়ন করে। ওই সময় পুরো দেশের ইন্টারনেট সংযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন। শেখ হাসিনাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি উড়াল দেওয়ার পর উন্মুক্ত হয়ে যায় গণভবন; চালু হয় ইন্টারনেট সংযোগও। এরপর গণভবনের ভেতরে ছাত্র-জনতার ঢল নামে। হাসিনার পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে প্রথমে দুপুর ২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের। এটি পিছিয়ে দুপুর ৩টায় করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত তিনি বিকাল ৪টার দিকে ভাষণ দেন। হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ঢাকা-কলকাতা রুটের ওয়েপয়েন্ট ‘বিইএমএকে’ পৌঁছানোর পর ট্রান্সপন্ডার ও স্বয়ংক্রিয় জিওলোকেটার সিস্টেম চালু করে। এরপর থেকেই এটি রাডারে দেখা যায়। ঢাকা বিমানবন্দরে রাডার স্ক্রিনের স্ক্রিন গ্র্যাব অনুসারে, এটি প্রথমে কলকাতার দিকে যাত্রা করে। পরে সেটি ভারতের রাজধানী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটির দিকে যায়।