বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

আমার সাফল্যের অনুপ্রেরণা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান

ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল , ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জেসিএক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড

আমার সাফল্যের অনুপ্রেরণা বসুন্ধরা গ্রুপের  চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের অনুপ্রেরণায় আবাসন খাতে ব্যবসা শুরু করেছিলেন জেসিএক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল। একে একে দেখেছেন সাফল্যের মুখ।  ব্যবসা ছড়িয়েছেন ব্যাংক, বীমা, অটোমোবাইল, জাহাজ, রেস্তোরাঁ, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে। এফবিসিসিআই পরিচালক সফল এই ব্যবসায়ীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- সাইফ ইমন ও ছবি তুলেছেন জয়ীতা রায়

 

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : শুরুর গল্প শুনতে চাই

ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল : ২০০৫ সালে আমি আবাসন ব্যবসা শুরু করি। সে সময় আমার একটা ছোট কোম্পানি ছিল নেফিয়ার হোমস লিমিটেড নামে। ছয়জন মিলে সেটা শুরু করেছিলাম। নেফিয়ার হোমস লিমিটেড এখন অবধি চলমান। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে শুরু করি জেমস। এই ব্যানারে আমরা প্রচুর প্রজেক্ট সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছি। বসুন্ধরায় এখনো অনেক প্রজেক্ট রয়েছে। আমি ২০১৮ সালে জাপানিদের নিয়ে নতুন একটা প্রতিষ্ঠান জেসিএক্স প্রতিষ্ঠা করি। ইচ্ছা ছিল শুরু থেকেই প্রিমিয়াম কাস্টমারদের নিয়ে উন্নতমানের কাজ করা। সেই ইচ্ছা থেকেই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের অনুপ্রেরণায় বসুন্ধরায় জাপানিদের নিয়ে বিনিয়োগ শুরু করি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : জেসিএক্স-এর জয়যাত্রা প্রসঙ্গে

ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল : আসলে যেমনটা বলছিলাম জেসিএক্স নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। আর এই স্বপ্নযাত্রা শুরু হয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রজেক্টের মাধ্যমে। এখানে বিশাল এলাকা। ভালো ভালো কাজ করার অনেক সুযোগ। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের উপদেশ অনুযায়ী আমরা এখানে একাধিক প্রজেক্ট শুরু করি। বর্তমানে এখানে অনেক কনসার্ন কাজ করছে। শুধু জেসিএক্সই নয়; আমি জাপাস্টিরও একজন ডিরেক্টর। আরও একটি জাপানিজ প্রতিষ্ঠানও এখানে কাজ করছে। আমি তাদের সঙ্গেও আছি। আসলে খেয়াল করলে দেখবেন সব মিলিয়ে জাপানিদের যে ফ্লেভার তা এই বসুন্ধরায় পাবেন; যা অন্য কোথাও পাবেন না।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে আসা প্রসঙ্গে

ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল : বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে এসেছি আমি। এখানে জাপানিরা ব্যাপক আকারে ইনভেস্ট করেছে। এটা দারুণ ব্যাপার। জাপান গার্ডেন সিটির পর কিন্তু রিয়েল এস্টেটে আর সেভাবে তারা ইনভেস্ট করেনি। ইতোমধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করা হয়েছে। যার সিংহভাগই বিনিয়োগ করা হয়েছে এই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। আর আবাসন শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাই সবচেয়ে ভালো। জাপানিদের বিনিয়োগে বসুন্ধরায় চমৎকার সব প্রজেক্ট হচ্ছে; যা আমাদের আবাসন শিল্পকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগ আনার কাজটা কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। অনেক রকম জটিলতা আছে। অনেক রকম কাঠখড় পুড়িয়েই কিন্তু আজকের অবস্থান তৈরি হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে অনেক শ্রম। বর্তমানে প্রায় ২০০ প্রজেক্ট চলমান রয়েছে বসুন্ধরায়।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ডলারের মান বৃদ্ধির কারণে ক্ষতি

ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল : আপনার প্রশ্নটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেখানে বসে আছি এটা জেসিএক্স টাওয়ার। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমি কাজটা শুরু করি। আমি বিনিয়োগ এনেছি বিদেশ থেকে ৭৮ বা ৭৯ টাকা দরে প্রতি ডলার। এখন আমাকে পাঠাতে হলে বেশি দরে পাঠাতে হচ্ছে। আমি যে আইআরআর ক্যালকুলেশন বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে করেছি তা কিন্তু এখন নেই। এখন যদি ৯৩ বা ৯৪ টাকা দরে আমাকে কিনতে হয়, তাহলে অনেক টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এটা আসলে একটা আনপ্রেডিক্টেবল সিচুয়েশন। তিন চার বছর আগে যে কনস্ট্রাকশন ব্যয় ছিল তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। ফলে যে সমস্যাটা হচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে লাভ করতে পারছে না। এতে খুব স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ হারাবে তারা। এর ফলে আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ব্যাপকভাবে আনতে পারছি না। আমাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বা আস্থার কারণে, কিংবা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের কারণে হোক আমরা সব সময়ই চেষ্টা করি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে। এই প্রতিবন্ধকতাগুলো আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : অনুপ্রেরণা হিসেবে কে কাজ করেছেন?

ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল : আমার অনুপ্রেরণা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান। তাঁর স্নেহ ও সান্নিধ্য আমাকে প্রতিনিয়ত শক্তি জোগায় সামনে এগিয়ে যাওয়ার। ওনার সহযোগিতা ছাড়া আমি আজকের এই অবস্থানে আসতে পারতাম না। জাপানিদের এ রকম ব্যাপক বিনিয়োগ নিয়ে এসে কাজ করতে পারতাম না। এ জন্য আমি সব সময় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের কাছে কৃতজ্ঞ। যখনই আমি তাঁর কাছে কোনো পরামর্শের জন্য গিয়েছি সব সময় তিনি আমাকে সময় দিয়েছেন। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বসুন্ধরা আবাসিকে কাজ করতে পেরে খুশি। নেফিয়ার, জেসিএক্স, জাপাস্টি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই বসুন্ধরাকেন্দ্রিক। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আমাকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অনেক সহযোগিতা করেছেন। ওনার মতো মানুষ যুগে যুগে একজনই হন। ওনার মতো দূরদর্শী, জ্ঞানী এবং সফল ব্যবসায়ী মানুষ নিঃসন্দেহে আমাদের মতো সবার জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আবাসনের সঙ্গে অন্যান্য কী ব্যবসা? ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল : রিয়েল এস্টেট ছাড়াও আরও কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমি বেঙ্গল ইসলামী লাইফের ডিরেক্টর। এ ছাড়াও বেঙ্গল ব্যাংকের স্পন্সর ডিরেক্টর। পাশাপাশি রয়েছে রেস্টুরেন্ট ব্যবসাও যা ইতোমধ্যে মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়। নাম সবার জানা ‘রিও লাউঞ্জ’।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আবাসন শিল্পে কেন?

ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল : আমার ইচ্ছা ছিল আমি গার্মেন্ট দিয়ে শুরু করি। আমার বাবা আমাকে সব সময় উৎসাহিত করেছেন। তার নাম গোলাম হোসেন চৌধুরী। তিনি নিজেও ব্যবসায়ী ছিলেন। লক্ষ্মীপুরে বাবা স্কুল-কলেজসহ অনেক কিছু প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাবার ইচ্ছা ছিল আমি যেন গার্মেন্ট ব্যবসায় আসি। আসলে আজ থেকে ২০/২৫ বছর আগে গার্মেন্টের উত্থান হচ্ছিল। আমাদের আত্মীয়স্বজন অনেকেই এই ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। তাই বাবাও চেয়েছিলেন আমি যেন গার্মেন্ট ব্যবসায় আসি। প্রথম দিকে আমি আসলে গার্মেন্ট ব্যবসায় যাইনি। আমার বাবা ছিলেন প্রথম শ্রেণির একজন ঠিকাদার। আমিও বাবার পথেই হাঁটতে শুরু করেছিলাম। ওখানে গিয়ে অবশ্য আমি হোঁচট খেয়েছি। বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন হই। পরবর্তীতে আবাসন শিল্পে আগ্রহী হয়ে উঠি। যেমনটা শুরুতেই বলছিলাম। ২০০৫ সালে আমি পুরোপুরিভাবে আবাসন খাতে ব্যবসা শুরু করি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  সফলতা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল : আমার সব সময় একটাই উদ্দেশ্য তা হলো, আমার গ্রাহকদের খুশি করা। ঠিক সময়ে বুঝিয়ে দেওয়া। তাদের খুশি আমার কাছে প্রথম। কত টাকায় আমি ফ্ল্যাট বিক্রি করলাম তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমি ভোক্তাদের কতটুকু খুশি করতে পারলাম তা। আমি সব সময় চাই আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে গ্রাহকদের জন্য সেরা মানের ফ্ল্যাট সঠিক সময়ে যেন বুঝিয়ে দিতে পারি। এটা করতে গিয়ে আমি অনেক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছি। কিন্তু আমার কাছে গ্রাহকরাই সবকিছুর ঊর্ধ্বে। আমার ইচ্ছা ছিল একটা ব্র্যান্ড তৈরি করা যার প্রতি মানুষের আস্থা এবং ভালোবাসা থাকবে। এত বছর এই ব্যবসা করছি কিন্তু আমার নামে কোথাও কোনো নেতিবাচক কিছু ঘটেনি।  এই সুনাম নিয়েই কাজ করে যেতে চাই। সেরা ডিজাইন, সেরা কোয়ালিটি নিয়ে কাজ করে যেতে চাই দেশের মানুষের জন্য।

সর্বশেষ খবর