ফুটবল খেলার জন্য পাগল ছিল সাতাশ বছরের বেঁটেখাটো যুবক লন্ডন হামলার অন্যতম চক্রী খুররম শাহজাদা বাট। নিজের দুই সন্তানকে নিয়ে অন্য বাবাদের মতোই পার্কে বেড়াতে যেত সে। এমনকি প্রতিবেশী বাঙালি যুবকের সঙ্গে টেবিল টেনিসও খেলেছে খুররাম। ধার্মিক, মাথায় ফেজ টুপি পরা একজন সংসারী মানুষ হিসাবেই তাকে দেখেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাকপুরের বাসিন্দা এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী।
জানা যায়, খুররামের বাবা পাকিস্তানের নাগরিক আর মা সোমালিয়ান। সাধারণ এই মানুষটিই জঙ্গি, তা জেনে রীতিমতো অবাক নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাঙালি তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। যদিও খুররাম সম্পর্কে পুলিশের কাছে আগেও তথ্য ছিল। বিবিসি-র একটি তথ্যচিত্র ‘দ্য জেহাদিস নেক্সট ডোর’-এ উঠে এসেছে এসব। জঙ্গি কার্যকলাপকে যে খুররাম সমর্থন করত, তা অনেকেই বলেছেন।
প্রথমদিকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প করলেও পরে তা শুধু সৌজন্য বিনিময়েই থেমে যেত। কাস্টমার সার্ভিস সহকারী ও বিখ্যাত স্ন্যাক্স বিপণিতে কাজ করত খুররাম। পূর্ব লন্ডনের বার্কিংয়ে বাড়ি ছিল খুররামের। প্রতিবেশীদের কাছে সে বেশ মিশুকে, ভাল একজন মানুষ। কিন্তু এই খুরামই অন্য দুই সঙ্গীকে নিয়ে ১২ ইঞ্চিরও বড় ছুরি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ঢুকে পড়ে পাশের বরো মার্কেটে। প্রাণ বাঁচাতে তখন যে যেদিকে পেরেছেন পালিয়েছেন।
আর খুররাম যাঁকে সামনে পেয়েছিলেন, এলোপাথাড়ি ছুরির ঘায়ে ক্ষতবিক্ষত করার নেশায় তখন তিনি বুঁদ ছিলেন। বাজারে এই তাণ্ডবলীলার পর পাশের একটি মদের বারেও এক মহিলা ও ম্যানেজারের উপর ছুরি দিয়ে হামলা চালায় খুররাম। এদিকে জঙ্গি কার্যকলাপে তাঁর মদত রয়েছে, খুরামের আচরণে শেষের দিকে এরকমটাই আঁচ করেছিলেন অনেকে। প্রশাসনের কাছে অভিযোগও জানান কেউ কেউ। এক কিশোরের সঙ্গে জিমে যেত খুররাম। তাকে বারবার আইএসে যোগ দিতে বলেছিল খুররাম।
এক মহিলাও বলেন, বাচ্চাদের মগজধোলাই করে জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগ দিতে উৎসাহ দিত সে, এই ভয়ে তিনি পুলিশকে খবরও দিয়েছিলেন। রামাদান ফাউন্ডেশন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রধান মহম্মদ শফিক তাঁর বক্তব্যের বিরোধিতা করায় ২০১৩ সালে অশ্রাব্য ভাষায় তাঁকে গালিগালাজ করেছিল খুররাম। আরবি ভাষায় শফিককে ‘বিশ্বাসঘাতক’ ও ‘সরকারের চাকর’ বলে উল্লেখ করে। শফিকই বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন আল মুহাজিরউনের প্রাক্তন প্রধান আঞ্জেম চৌদারির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা। গত শনিবারের সন্ত্রাসবাদী হামলায় রক্তাক্ত লন্ডন মনে আতঙ্ক নিয়েও ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে। অন্যদিকে, সন্ত্রাসবাদীদের জানাযা করতে অস্বীকার করেছেন ব্রিটেনের ইমামরা।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
বিডি প্রতিদিন/৭ জুন ২০১৭/হিমেল