নাটকের শুরু ২০০২ সালে। ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান বাবা গুরমিত রাম রহিম সিংহের নামে নিজের এক শিষ্যকে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। অজ্ঞাতনামা জনৈক চিঠি পাঠান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ীর কাছে। সেই চিঠির ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পাঞ্জাব ও হারিয়ানা হাইকোর্ট মামলা শুরু করে রাম রহিমের বিরুদ্ধে। সিবিআইকে আদালত নির্দেশ দেয় এই অভিযোগ তদন্ত করে দেখার।
১৫ বছর পরে সেই মামলার রায় দিল হরিয়ানার পাঁচকুলার বিশেষ সিবিআই আদালত। দোষী সাব্যস্ত হলেন ৫ কোটি ‘সন্তানের’ বাবা। সোমবার তার বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করবে আদালত। আইন অনুযায়ী তার সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
এই ঘটনার পরেই শুরু হল তাণ্ডব। পুলিশকে পাথর ছোঁড়া থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে আগুন দেওয়া কিছুই বাদ দেননি বাবার ভক্তরা। শতাধিক গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় এবং আগুনও লাগানো হয়। তৈরি ছিল পুলিশ ও সেনাও। হিংসার আশঙ্কা করে আদালতের নির্দেশও ছিল, রাম রহিমের ‘সন্তানেরা’ ঝামেলা পাকাতে এলেই গুলিও চালাতে পারে পুলিশ। শেষে গুলি চালাতে হল। তাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
প্রায় ৭০০ গাড়ির কনভয় নিয়ে কড়া নিরাপত্তায় বাবাকে কোর্টে পৌঁছে দেওয়া হয়। ৯৭ কোম্পানি সিআরপিএফ, ১৬ কোম্পানি র্যাফ, ৩৭ কোম্পানি এসএসবি, ১২ কোম্পানি আইটিবিপি ও ২১ কোম্পানি বিএসএফ মোতায়েন করা হয়েছে পাঁচকুলায়। ইন্টারনেট সার্ভিস আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ধর্ষণের অভিযোগ ছাড়াও, রাম রহিমের বিরুদ্ধে দু’টি খুনের মামলাও রয়েছে। আদালতে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও, শাস্তির ঘোষণা হবে আগামী সোমবার। ২০১৫ সালে সিনেমাও বানিয়েছিলেন তিনি। এমএসজি: দ্য মেসেঞ্জার অফ গড নামে এই ছবিটিকে ঘিরে বিতর্কও কম হয়নি। কুসংস্কার ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে রাম রহিমের নামে।
এর পরেও তিনি পাঁচটি ছবি বানিয়েছেন। ষষ্ঠ ছবি মুক্তি পেতে চলেছে কয়েকদিনের মধ্যে। এমনকি বাবা ‘জেড’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তাও পেয়ে থাকেন। কিন্তু তার ভক্ত, যাদের বাবা ভালবেসে ‘প্রেমী’ নামে ডাকেন, তারা বাবার নামে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখালেন। অচল করলেন জীবনযাত্রা।
বিডি প্রতিদিন / ২৫ আগস্ট, ২০১৭ / তাফসীর