যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মারাত্মক আকস্মিক বন্যার চার দিন পরও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৬১ জন। গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট মঙ্গলবার এক প্রেস কনফারেন্সে জানান, কের কাউন্টি অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং নিখোঁজদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও রয়েছে।
নিখোঁজদের তালিকায় আছেন ‘ক্যাম্প মিস্টিক’ নামক একটি খ্রিস্টান মেয়ে শিশুদের গ্রীষ্মকালীন শিবিরের পাঁচজন ক্যাম্পার ও এক জন কাউন্সেলর। শিবিরটি গুয়ারডালুপে নদীর ধারে অবস্থিত।
বন্যায় এখন পর্যন্ত মোট ১১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কেরভিল শহর ও আশপাশের অঞ্চলেই প্রাণ হারিয়েছেন ৯০ জনের বেশি।
গভর্নর অ্যাবট বলেন, প্রত্যেক নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান থেমে থাকবে না। তিনি আরও জানান, নিখোঁজের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এবং যেকোনো নিখোঁজ ব্যক্তির খবর থাকলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে তা জানানোর আহ্বান জানান।
উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিচ্ছে টেক্সাস ন্যাশনাল গার্ড। মেজর জেনারেল থমাস স্যুয়েলজার জানান, উদ্ধারকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে চিনুক ও ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার, যাতে রয়েছে আধুনিক রেসকিউ হোইস্ট সিস্টেম।
উদ্ধারে সহায়তার জন্য আরকানসাস থেকেও চারটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার টেক্সাসে পৌঁছেছে। এছাড়াও উদ্ধার কাজ তদারকিতে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক রিপার ড্রোন।
এদিকে শুধু টেক্সাস নয়, পাশের নিউ মেক্সিকো রাজ্যেও মঙ্গলবার প্রবল বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। রুইদোসো গ্রামে প্রায় ৮.৮ সেন্টিমিটার (৩.৫ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাতের ফলে নদীর পানি গ্রাম প্লাবিত করে। এতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত তিনজনের। যদিও ওই বন্যার পানি বর্তমানে অনেকটাই নেমে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
টেক্সাসের কের কাউন্টিতে এখনোও উদ্ধারকারী দল হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং প্রশিক্ষিত ডুবুরি দল নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাস্তা ধসে পড়া, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের কারণে উদ্ধার কাজে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে জরুরি বিভাগ।
ঘটনার ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় স্কুল, গির্জা এবং কমিউনিটি সেন্টারগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে দেশজুড়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার, পানি ও ওষুধ সরবরাহ করছে দুর্গত এলাকাগুলোতে।
গভর্নর অ্যাবট জানিয়েছেন, ফেডারেল সরকারের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি প্রাণ রক্ষা ও নিখোঁজদের সন্ধানে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের প্রতি সতর্কতা জারি রেখেছে টেক্সাসের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। কোনোভাবেই নদী বা প্লাবিত সড়কের ধারে না যেতে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল