অবশেষে মুখোশ খুলল পাকিস্তানের। পাকিস্তানের মাটিতেই ফুলেফেঁপে উঠছে লস্কর ও জৈশের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো এই প্রথম স্বীকার করে নিয়েছে ইসলামাবাদ।
বুধবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোয়াজা মহম্মদ আসিফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের মাটিতে রমরমিয়ে চলছে লস্কর, জৈশ ও হাক্কানি নেটওয়ার্ক-এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর প্রশিক্ষণ শিবির। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, জঙ্গি সংগঠনগুলোর উপর লাগাম টানার কথাও বলেন তিনি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম 'জিও নিউজ'কে আসিফ জানান, পাকিস্তানের মাটিতে লস্কর ও জৈশের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। এবার নিজেদের ঘর গুছিয়ে নেওয়ার সময় হয়েছে।
উল্লেখ্য, 'ব্রিকস সামিটের' পরই পাকিস্তান উল্টো সুর তুলেছে। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে কার্যত নাম না করে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়েছে ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো। এক যৌথ বিবৃতিতে আফগানিস্থানসহ বিশ্বের সর্বত্র সন্ত্রাসবাদী হামলার তীব্র নিন্দায় একযোগে সরব হয়েছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
ওই বিবৃতিতে লস্কর-ই-তৈবা, জৈশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর নামও উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে, সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে 'পরম বন্ধু' চীনের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তান। তবে ভাঙলেও মচকাতে রাজি ছিল না ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররম দস্তাগির দাবি করেছিলেন, পাকিস্তানের মাটি জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য নয়। পাকিস্তান কখনই সন্ত্রাসবাদী শক্তির নিরাপদ আস্তানা নয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্রিকস সম্মেলনে চীনের চাপ ও আমেরিকার কড়া অবস্থানে প্রবল চাপে রয়েছে পাকিস্তান। সম্প্রতি মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হলেও, সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে 'বন্ধু' ভারতের পাশেই দাঁড়ালেন রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন। তাই ক্রমশ আন্তর্জাতিক মহলে একঘরে হয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান।
বেজিংয়ের উপর ভরসা করে সন্ত্রাসবাদীদের সাহায্যে ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালানোর হিম্মত পাকিস্তান দ্রুত খোয়াচ্ছে। চীনও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই চাপে পড়ে উল্টো সুর ধরেছে পাকিস্তান, এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী আসিফের কথায় ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্ক যে তলানিতে তা আরও একবার স্পষ্ট হয়েছে। '৯/১১-র লড়াই আমাদের ছিল না। তবুও আমেরিকার হয়ে যুদ্ধ করেছি আমরা। ফলে প্রবল ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছে আমাদের দেশ-এমনটাই বলেন আসিফ। এছাড়াও চীনে যে পাকিস্তানের মোহভঙ্গ হয়েছে, তাও একপ্রকার স্পষ্ট হয়েছে তার কথায়। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে 'বন্ধু' চীনকে আর ভরসা করতে পারছে না পাকিস্তান।
নিজের কথায় আসিফ স্পষ্ট করে দিয়েছেন সন্ত্রাসবাদের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে চীনও আর পাকিস্তানকে আড়াল করতে পারবে না। তাই এবার নিজেদের শুধরে নিতে হবে।
তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পাকিস্তানের প্রভাবশালী মিলিটারি ও আইএসআই'র প্রভাব খর্ব করে সন্ত্রাসবাদীদের উপর লাগাম টানতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে সে দেশের সরকারকে।
বিডি প্রতিদিন/০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭/আরাফাত