জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর ভারতের স্বাধীনতাকামী শিখদের মদদ দিচ্ছে পাকিস্তান। রদের সিদ্ধান্তে ওই অঞ্চলে চলমান সঙ্কট মোকাবিলায় ভারত যখন হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে বিষফোঁড়ার মতো মূর্তিমান হয়ে দেখা দিয়েছে আরেক আতঙ্ক।
কয়েক যুগ ধরে পাঞ্জাব প্রদেশে সংখ্যাগুরু শিখ ধর্মাবলম্বীদের একাংশ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘স্বাধীন খালিস্তান’ রাষ্ট্র গড়ার আন্দোলন চালিয়ে আসছে। গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে ওই আন্দোলন তুঙ্গে উঠেছিল। ১৯৮৪ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখরাই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ওপর গুপ্তহত্যা চালায়। এছাড়া সে সময় আয়ারল্যান্ড উপকূলে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি প্লেনও বিধ্বস্ত করে তারা। ওই ঘটনায় যাত্রী ও ক্রুসহ ৩২৯ জন নিহত হন।
পরবর্তীতে ৯০ দশকে ভারত সরকারের ব্যাপক পুলিশি অভিযান, ধরপাকড় ও জনসমর্থন হারানোর ফলে স্তিমিত হয়ে পড়ে স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলন।
কিন্তু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থতির সুযোগে পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতায় আবারও বিচ্ছন্নতাবাদী শিখদের ওই আন্দোলন দানা বাঁধছে বলে আশঙ্কা ভারতের। এরই মাঝে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বাধীনতাকামী শিখ প্রতিনিধিরা পুনরায় খালিস্তান আন্দোলনের ছাইচাপা আগুন জ্বালাবার চেষ্টা করছে। কাশ্মীর ইস্যুতে বিশেষ সুবিধা করতে না পারার ফলেই পাকিস্তান এবার নিজেদের সীমান্তঘেঁষা পাঞ্জাবকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ভারতের বিভিন্ন মহলের।
বৃহস্পতিবার জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ এ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, সম্প্রতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল মির্জা আসলাম বেগ প্রকাশ্যে শিখদের খালিস্তান আন্দোলনকে সহযোগিতা ও সমর্থনের ব্যাপারে ইসলামাবাদকে আহ্বান জানায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে আসলাম বেগ বলেন, ভারতকে সঙ্কটে ফেলতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও সরকারের উচিত খালিস্তান আন্দোলনকে ব্যবহার করা।
নিক্কেই জানায়, আগামী শনিবার লাহোরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিখ নেতা, ব্যবসায়ী ও সক্রিয় কর্মীদের নিয়ে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে পাকিস্তান। এতে সম্মেলনকার্য পরিচালনার নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা গোপাল সিং চাওলাকে। ধর্মীয় আয়োজন হিসেবে দেখানো হলেও, খালিস্তান আন্দোলন যে এখনও জীবন্ত এ আয়োজনে সে বার্তা গোপন নয়। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা যখন তুঙ্গে সে মুহূর্তে এ আয়োজনকে বিশেষ তাৎপর্যের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের চলমান দ্বন্দের মাঝে পাকিস্তান ভারতের কূটনীতিক বহিষ্কার, বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন এবং সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও পাঞ্জাবের করতারপুর করিডোর নির্মাণের কাজ বন্ধ করেনি। পাকিস্তান অংশে থাকা শিখ তীর্থস্থান দর্শনে ভিসা ছাড়াই ভারতের শিখরা যাতে যাতায়াত করতে পারে, সে উদ্দেশ্যেই এ করিডোর নির্মিত হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান চলতি বছররে নভেম্বরের মধ্যেই এর কাজ সম্পন্ন করতে চান।
প্রকল্পের এক পর্যায়ে ইসলামাবাদ বিচ্ছিন্নতাতাবাদী শিখ নেতা গোপাল সিং চাওলাকে আয়োজক কমিটিতে রাখায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনায় চলতি বছরের মার্চে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আপত্তি জানানো হয়। পরে জুলাই মাসে পাকিস্তান চাওলাকে কমিটি থেকে সরিয়ে দেয়। এসব ছাড়াও, গুরুদুয়ারা দর্শনে পাকিস্তান সফরকালে শিখ জনগোষ্ঠী ভারতবিরোধী বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণার সম্মুখীন হন বলেও উদ্বেগের কমতি নেই ভারত সরকারের।
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন ও জম্মুভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষক অনিল গৌড় নিক্কেইকে জানান, ভারত বর্তমানে সেই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, ১৯৮০-র দশকে খালিস্তান আন্দোলন নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় পাঞ্জাবে শত শত নিরীহ মানুষ নিহত হন। কাশ্মীর ইস্যুতে নিজেদের চাওয়া পূরণে ব্যর্থ হয়ে, পাঞ্জাবে সহিংসতা ছড়ানোর অভিপ্রায়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান ।
অন্যদিকে কানাডাভিত্তিক শিখ ব্যবসায়ী ও সক্রিয় কর্মী জিতেন্দর সিং কাশ্মীর ইস্যুতে উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে নিক্কেইকে বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদের সিদ্ধান্ত শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য এক আশীর্বাদ।
‘এটি শিখদের স্বাধীন মাতৃভূমির দাবিতে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করেছে। খুব শিগগিরই কাশ্মীরি ও শিখরা ভারত থেকে মুক্ত হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিখ সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ ২০২০ সালে স্বাধীন খালিস্তান ইস্যুতে শিখ অধ্যুষিত পাঞ্জাবে গণভোট আয়োজনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছে বলেও জানান এ শিখ ব্যবসায়ী।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত