১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ১৭:৪৫

সিরিয়ার মর্গে মর্গে ভিড়, বসতবাড়ি ছাড়া লাখো মানুষ

অনলাইন ডেস্ক

সিরিয়ার মর্গে মর্গে ভিড়, বসতবাড়ি ছাড়া লাখো মানুষ

কোমরের নিচ থেকে শরীর উড়ে গেছে বোমায়। বাকিটুকু নীল-সাদা ডোরাকাটা চাদরে ঢাকা। নিথর। তবু থেকে থেকেই সেই চাদর সরিয়ে নিহতের মাথায় হাত বোলাচ্ছেন এক তরুণী। কাপড় দিয়ে রক্ত মুছছেন, আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। 

উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় রাস আল-আইন শহরে এক হাসপাতালের পিছনের দিকে ছোট্ট কাঠের ঘর। আপাতত সেটাই অস্থায়ী মর্গ। বাড়ছে ভিড়। তুর্কি সেনা অভিযানের চতুর্থ দিনে সেখানে এখন সহযোদ্ধাদের দেহ গুণছেন কুর্দিরা। শহরের অন্যান্য হাসপাতালের মর্গেও বাড়ছে স্বজনদের ভিড়।

পাশেরই একটা টেবিলে রাখা ঢাউস নীল ব্যাগ। চেন খুলতেই বেরিয়ে এলো দেহ। নিথর। পরনে সেই এক সবুজ-জংলা ছাপের সেনা উর্দি। পাশের টেবিলে আরও একটা দেহ। তা দেখিয়ে চিৎকার করে উঠলেন এক প্রবীণ কুর্দি, ‘বলতে পারেন, আমার ছেলেটা কী দোষ করেছিল? ও তো আর এসডিএফের সদস্য নয়! তবু শেষ করে দিল তুর্কি বাহিনী।’ 

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, বুধবার হামলা শুরুর পর থেকে ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৫০ জন কুর্দি যোদ্ধাকে (আঙ্কারার ভাষায় ‘জঙ্গি’) মেরে ফেলেছে তাদের বাহিনী। 

স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, তুরস্কের বিমান হানায় শুধুই আজই ১০ জন নিরীহ নাগরিকের প্রাণ গেছে। চার দিনের হিসেবে সংখ্যা ২৮। ঘরছাড়ার সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে আজ। আজও সীমান্ত লাগোয়া সিরিয়ার একাধিক শহরের আকাশে তুরস্কের যুদ্ধবিমানকে চক্কর দিতে দেখা গেছে। জায়গায় জায়গায় বোমা পড়েছে। শোনা গেছে নাগাড়ে গোলা-গুলির শব্দ।

ভারত, ইটালির মতো দেশ, এমনকি জাতিমংঘও তুরস্কের অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তুর্কি বাহিনীকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ন্যাটো। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আজ কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে তুরস্কের এই কুর্দিবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। অস্ট্রেলিয়ার একাধিক শহরেও এক ছবি দেখা গেছে। আপাতত তারা তুরস্ককে অস্ত্র বিক্রি করবে না বলে জানিয়েছে জার্মানি। 

আঙ্কারা তবু অনড়। আজ তুরস্ক দাবি করেছে, কুর্দি যোদ্ধাদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রাস আল-আইন ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ দখল করে নিয়েছে তাদের বাহিনী। যদিও কুর্দিরা এই দাবি মানতে নারাজ। 

সূত্রের খবর, যত দিন কাটছে তত বেশি পাল্টা হামলায় জোর বাড়াচ্ছে এসডিএফ। আমেরিকা মধ্যস্থতার কথা বললেও, বরফ গলেনি। উল্টে, তুরস্কের বোমারু বিমান তাদের ঘাঁটিতেও আছড়ে পড়েছে বলে দাবি করল আমেরিকা। 

পেন্টাগনের মুখপাত্রের দাবি, কাল স্থানীয় সময় রাত ৯টা নাগাদ কোবানি শহরের কাছে মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ন্যাটোর সদস্য তুরস্ক। তবে মার্কিন সেনার পক্ষ থেকে হতাহতের কোনও খবর নেই। 

স্বাভাবিক ভাবেই মার্কিন বাহিনীর উপর এই হামলার অভিযোগ স্বীকার করেনি আঙ্কারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প প্রশাসনেরই একাধিক কর্তা, মার্কিন ঘাঁটিকে নিশানা করে তুরস্কের এই হামলাকে নেহাতই দুর্ঘটনা বলছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিরিয়ার হাল ফেরাতে, সেনা পাঠিয়ে বা নিষেধাজ্ঞার পাহাড় চাপিয়ে তুরস্ককে ‘শায়েস্তা’ করার ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এদিকে আজই আমেরিকার সিরিয়া-নীতিতে কটাক্ষ করতে শোনা গেল সৌদি রাজকুমার তুর্কি আল-ফয়সলকে। তার কথায়, ‘আমেরিকার কথায় আর কাজে এত ফারাক যে সত্যি-মিথ্যেটা বোঝাই যায় না। এই যেমন, সিরিয়ায় ওদের বাহিনী আছে না নেই, সেটাই এখনও স্পষ্ট নয়।’ 

গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়া থেকে সেনা সরানোর কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। চলতি মাসের গোড়ায় সেই পর্ব শুরু হতেই কুর্দদের হটাতে অভিযানে নামে আঙ্কারা। এভাবে রাতারাতি সেনা সরানো নিয়েও আমেরিকাকে বলেছেন ফয়সল। তার দাবি, সিরিয়াকে বোকা বানানোর এই ট্র্যাডিশন বারাক ওবামা জামানা থেকেই চলে আসছে।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর