পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে নিয়ে জটিলতার অবসান হয়নি।
দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। ফলে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি থাকতে পারবেন কিনা তা অনিশ্চয়তার মধ্যেই রয়ে গেল।
আদালত তার মেয়াদ বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তটি বাতিল ঘোষণা করলে কে হবেন পরবর্তী সেনাপ্রধান সেটিও একটি প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।
আবার আদালত যদি বিষয়টি ফয়সালা করতে আরও কয়েক দিন সময় নেয়, তবুও তাতে জটিলতার সৃষ্টি হবে। কারণ ২৯ নভেম্বর শেষ হবে জেনারেল বাজওয়ার মেয়াদ। ইতোমধ্যেই আদালত তার মেয়াদ বাড়ানোর আদেশ স্থগিত করেছেন। এখন যদি আদালত ওই স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন, তবে শূন্যতার সৃষ্টি হবে।
এদিকে পাকিস্তান সরকার জটিল পরিস্থিতিতে ইমরান খান সরকার জরুরি অবস্থা জারি করার বিষয়টি ভাবছে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আসিফ সাইদ খান খোসার নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চ বুধবার শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মামলাটি মুলতবি ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতি হলেন মাজহার আলম ও সৈয়দ মনসুর আলী শাহ।
আদালত জেনারেল বাজওয়ার মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। জেনারেল বাজওয়ার মেয়াদ বাড়ানোকে চ্যালেঞ্জ করে রিয়াজ রাহি নামের এক ব্যক্তির দায়ের করা পিটিশনটি প্রত্যাহারের আবেদনের ওপর মঙ্গলবার শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি আসিফ সাইদ খোসা বলেন, কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতিই পারেন সেনাপ্রধানের মেয়াদ বাড়াতে। প্রধান বিচারপতি আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে জনস্বার্থে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৩(৩)-এর আলোকে পিটিশনটিকে সুয়ো মোটো নোটিশে পরিণত করেন।
প্রধান বিচারপতি শুনানির সময় বলেন, সেনাপ্রধানের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর নেই। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরই সেনাপ্রধানের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি খোসা তখন বলেন, রাষ্ট্রপতি যদি ১৯ আগস্ট সারমর্ম অনুমোদন করে থাকেন, তবে কেন ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ওই সারমর্মে অনুমোদন করলেন?
এই ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী সারমর্মে সই করেন।
মঙ্গলবার শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, মন্ত্রিসভার মাত্র ১১ জন সদস্য সেনাপ্রধানের মেয়াদ বাড়ানোর সারমর্মে অনুমোদন দিয়েছিলেন। আমরা বলতে পারি না যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য তা অনুমোদন করেছিলেন।
তিনি জানতে চান, ২৫ মন্ত্রীর মধ্যে মাত্র ১১ জন হ্যাঁ বলেছেন। গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়। যারা জবাব দেননি, তাদের জবাবের জন্য আমাদের অপেক্ষা করা উচিত। এসব সদস্য আসলে ‘না’ও বলেননি। সরকার কি মনে করেছে, এসব সদস্য আসলে হ্যাঁ বলেছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে তার ক্ষমতা নেই। তারপর দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি কারোই ক্ষমতা নেই এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হল মন্ত্রিসভায় ২১ আগস্ট।
প্রধান বিচারপতি আশ্চর্য হয়ে জানতে চান, কেন মেয়াদ বাড়ানোকে পুনঃনিয়োগ হিসেবে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হল?
তিনি বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটি রহস্যে ঘেরা। প্রথমে মন্ত্রিসভার অনুমোদন দেওয়া প্রয়োজন ছিল। তারপর তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া দরকার ছিল।
আদালত তারপর সেনাপ্রধানের মেয়াদ বাড়ানোর শুনানি পরবর্তী দিন পর্যন্ত মুলতবি রাখেন।
সূত্র : জিও টিভি, দ্য ডন ও দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল
বিডি প্রতিদিন/কালাম