পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি বিশেষ আদালত। ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর অবৈধভাবে সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে।
পেশোয়ার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ওয়াকার আহমাদ শেঠের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের বিশেষ আদালত গতকাল ছয় বছর ধরে ঝুলে থাকা এ মামলার রায় ঘোষণা করে। এর ফলে পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম বেসামরিক আদালতে দেশদ্রোহের অভিযোগে কোনও সাবেক সেনাপ্রধানের বিচারের রায় ঘোষণা হলো। তবে পারভেজ মোশাররফকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এ রায়কে মেনে নিতে পারছে না দেশটির সেনাবাহিনী।
এ রায়ের বিপক্ষে সামরিক বাহিনীর অবস্থান তুলে ধরে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর এক বিবৃতিতে বলেন,বলেন, ‘একজন সাবেক সেনাপ্রধান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের কমিটির চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, যিনি ৪০ বছর দেশের সেবা করেছেন, দেশের হয়ে যুদ্ধে লড়েছেন, তিনি কোনোভাবেই দেশদ্রোহী হতে পারেন না। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাশা করে যে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তানের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ন্যায়বিচার করা হবে।’
বিবৃতিটি দেয়া হয় পাঞ্জাব প্রদেশের শহর রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দফতের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা এক বৈঠকে মিলিত হওয়ার পর। আদালত পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার পরপরই সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা জরুরি ওই বৈঠকে বসে এমন বিবৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দেশটির সেনা সমর্থিত সরকারের জন্য সামরিক বাহিনীর এমন বিবৃতিকে হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
১৯৯৯ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের পর প্রায় এক দশক দেশ শাসন করা পারভেজ মোশাররফ এখন আছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখান থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগকে তিনি ‘ভিত্তিহীন’ বলেছেন। পারভেজ মোশাররফ বলেছেন, ‘আমি দশ বছর দেশের (প্রেসিডেন্টের) দায়িত্ব পালন করেছি। দেশের জন্য লড়াই করেছি। এই মামলায় আমার বক্তব্য শোনা হয়নি, অথচ আমাকে দোষী বানানো হয়েছে।’ ডন জানিয়েছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন পারভেজ মোশাররফ। সুপ্রিম কোর্ট এই রায় বহাল রাখলে তখন তার সামনে কেবল প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকবে।’
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মোশাররফের বিরুদ্ধে যখন এই মামলা করা হয়, তখন নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ ক্ষমতায়। বিশেষ আদালত ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় মোশাররফকে অভিযুক্ত করে বিচার শুরু করে। কিন্তু পরে বিচারের কাজ ঝুলে যায়। ওই অবস্থায় ২০১৬ সালের মার্চে চিকিৎসার কথা বলে দেশ ছাড়েন পাকিস্তানের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।
বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ