আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলেছে ভারতে। ২০১৯ সালে প্রতিদিন গড়ে ৩৮১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ ও কর্ণাটক-এই পাঁচ রাজ্য মিলিয়ে যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে তা গোটা দেশের ৪৯.৫ শতাংশ। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) এক পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সেখানে দেখা গেছে ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে ৩.৪ শতাংশ হারে। ২০১৭ সালে যেখানে ১,২৯,৮৮৭ টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে সেখানে ২০১৮ সালে ১,৩৪,৫১৬ টি এবং ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১,৩৯,১২৩টি। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় আত্মহত্যার শতকরা হার বৃদ্ধি পেয়েছে ০.২ শতাংশ।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন এনসিআরবি’এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী পুরো দেশের তুলনায় শহরগুলোতে আত্মহত্যার হার বেশি। পুরো দেশে আত্মহত্যার গড় হার যেখানে ১০.৪ শতাংশ সেখানে শহরে আত্মহত্যার গড় হার ১৩.৯ শতাংশ।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরে ভারতে যে যে কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে তার মধ্যে ৩২.৪ শতাংশের পেছনে পারিবারিক সমস্যা, ৫.৫ শতাংশের পেছনে রয়েছে বিবাহজনিত সমস্যা, আর ১৭.১ শতাংশ মানুষ রোগের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আর এসব ক্ষেত্রে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৫৩.৬ শতাংশ মানুষ, বিষ খেয়ে ২৫.৮ শতাংশ, পানিতে ডুবে ৫.২ শতাংশ।
দেখা গেছে, প্রতি ১০০টি মৃত্যুর পেছনে রয়েছে ৭০.২ শতাংশ পুরুষ, ২৯.৮ শতাংশ নারী।
২০১৯ সালে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে মহারাষ্ট্রে ১৮,৯১৬ টি (১৩.৬ শতাংশ), তামিলনাডুতে ১৩৪৯৩ (৯.৭ শতাংশ), পশ্চিমবঙ্গে ১২৬৬৫ (৯.১ শতাংশ), মধ্যপ্রদেশে ১২৪৫৭ (৯ শতাংশ), কর্ণাটকে ১১২৮৮ টি (৮.১ শতাংশ)। এই পাঁচটি রাজ্য মিলিয়ে আত্মহত্যার শতকরা হার পুরো দেশের ৪৯.৫ শতাংশ। দেশের বাকি ২৪টি রাজ্য এবং ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে আত্মহত্যার শতকরা হার ৫০.৫ শতাংশ।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে দেশের মধ্যে তুলনামূলকভাবে অনেক কম আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে। পুরো দেশের মাত্র ৩.৯ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে হিন্দি বলয়ের এই রাজ্যটিতে।
গত বছর যত মানুষ আত্মহত্যা করেছেন তার ১২.৬ শতাংশ অশিক্ষিত, ১৬.৩ শতাংশ মানুষের শিক্ষা প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত, ১৯.৬ শতাংশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত, ২৩.৩ শতাংশ শিক্ষা মাধ্যমিক স্তর এবং মাত্র ৩.৭ মানুষের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা তার ওপরে। ভারতের মতো দেশে আত্মহত্যার এই প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ