বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্যসংকট নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি হয়েছে জানিয়ে সতর্ক করে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, লক্ষ লক্ষ শিশু ও যুবকসহ বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই চিকিৎসার আওতার বাইরে।
বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য সংকট নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশকালে শুক্রবার (১৭ জুন) এ সতর্কবার্তা দেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। 'বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য-২০২২ ট্রান্সফর্মিং মেন্টাল হেলথ ফর অল'-প্রতিবেদনটি একটি ভিডিওর মাধ্যমে প্রকাশ করেন গুতেরেস। এ সময় ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, আমরা মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে বাস করছি। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো- এই সংকটে থাকা মানুষের একটি বড় অংশ চিকিৎসা সেবার বাইরে রয়েছেন।
আক্ষেপ প্রকাশ করে গুতেরেস বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য নয়, পর্যাপ্তও নয়। তার কথায়- যারা মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে আছেন তারা শারীরিক নির্যাতন, শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এই সংকটের কারণে মানবিক ও আর্থিক উভয়ই বিশাল ক্ষতি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শুধু হতাশা ও উদ্বেগের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিবছর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব সতর্ক করে বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় যে অধিকাংশ দেশে, স্বাস্থ্যনীতির কৌশলে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি উপেক্ষিত হয়। জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করবে।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে- সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০ কোটি মানুষ কয়েক ধরনের মানসিক ব্যাধিতে ভুগছেন। শুক্রবার (১৭ জুন) এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস ঘেব্রিয়েসুস বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ হলো সবার জন্য উন্নত জীবন ও ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আঘাত হানার আগেও একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য কার্যকর ও মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা প্রয়োজন হতো। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষও তাদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা পায়নি।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ধনী ও গরিব দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক ফারাক রয়েছে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ১০ জনের মধ্যে সাতজন মানসিক রোগের চিকিৎসা পেয়ে থাকে। তুলনামূলক নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ মানসিক রোগের চিকিৎসা পেয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, সহায়তার অভাবে উচ্চ আয়ের দেশসহ বিশ্বের সব দেশে হতাশার ক্ষেত্রে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হতাশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ আনুষ্ঠানিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পায়। যদিও উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে কম করে হলেও ২৩ শতাংশ হতাশাগ্রস্তদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। অপরদিকে নিম্ন ও নিম্ন-মাঝারি আয়ের দেশগুলোতে এ হার তিন শতাংশ কমে গেছে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ও সুরক্ষার জন্য আমাদের মনোভাব, কার্যকলাপ ও পদক্ষেপের পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
সূত্র- এনডিটিভি, দ্যা প্রিন্ট।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ