আগামী শনিবার উদ্যাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। হাতে আছে আর মাত্র চার দিন। রাজধানীর প্রেক্ষাপটে তিন থেকে চার দিন আগে কোরবানির পশুর হাট জমে ওঠে। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ থেকেই বেচাকেনা জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা পাইকারদের। এদিকে সারা দেশ থেকে প্রচুর পশুর সমাগম ঘটছে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে। দুই দিন টানা বৃষ্টিতে গরুবাহী গাড়ি কিছুটা কম ছিল রাজধানীমুখী। তবে গতকাল দুপুরের পর থেকে এই চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। দক্ষিণ ও উত্তর সিটির বেশ কিছু হাট ঘুরে দেখা গেছে ধারাবাহিকভাবে ট্রাক থেকে গরু নামাচ্ছেন ব্যাপারীরা।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর দনিয়া কলেজ মাঠের (শনির আখড়া) হাট ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশুবোঝাই ট্রাক নিয়ে এখানে আসছেন ব্যাপারীরা। নজরে পড়েছে পশু দেখা, দরদাম করার দৃশ্য। অনেকে এখনই পছন্দসই পশু বেছে নিচ্ছেন। আবার কেউ এসেছেন দাম যাচাই করতে। এমনটাই জানালেন গরু কিনতে আসা ক্রেতারা। শনির আখড়া হাটের ইজারাদার তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, ‘মূলত ঈদের আগে শেষ তিন-চার দিন গরু বেচাকেনা বেশি হয়। সেই হিসেবে সোমবার (আজ) থেকে পুরোপুরিভাবে গরু বেচাকেনার আশা করছি আমরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা হাটে গরু নিয়ে এসেছেন। তারা আমাদের মেহমান। তাদের শখের পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। তাদের দেখভাল এবং নিরাপত্তার দায়িত্বও আমাদের। চেষ্টা করছি, সুন্দরভাবে হাটটি পরিচালনা করতে। যেহেতু মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে তাই প্রাধান্য দিচ্ছি পানিনিষ্কাশন ও কাদামুক্ত পরিবেশ রাখতে। এ ছাড়া পাইকারদের জন্য বিভিন্ন সুযোগসুবিধা বাড়ানো হয়েছে।’ এদিকে ধোলাইখাল সাদেক হোসেন খোকা মাঠসংলগ্ন গরুর হাটে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যে ট্রাক থেকে গরু নামছে। তবে বৃষ্টি না থাকলে আজ থেকে ভালো বিক্রির আশা হাট কর্তৃপক্ষের।
এ ছাড়া শাহজাহানপুর হাটে দেখা গেল একই চিত্র। এক গরু বিক্রেতা জানান, ক্রেতারা দরদাম করছে। তবে এখনো সে রকম বিক্রি শুরু হয়নি। আশা করছি আগামীকাল (আজ) থেকে বিক্রি বাড়বে।
অন্যদিকে উত্তরার দিয়াবাড়ি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। এ ছাড়া গতকাল সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা ট্রাকে গরু নিয়ে আসছেন। কয়েকটি গরু বিক্রিও হয়েছে। তবে এ হাটে ছোট আকৃতির গরুর দাম বেশি হাঁকা হচ্ছে বলে ক্রেতারা জানান। ঢাকার বাইরে থেকে গরু নিয়ে আসা পাইকার রফিকুল আলম বলেন, ‘হাটে পর্যাপ্ত গরুর আমদানি হয়েছে। কালকে ক্রেতা কিছুটা কম ছিল, আজকে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। আশা করছি আগামীকাল (আজ) পুরোপুরি হাট জমে উঠবে।’ এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থান স্থান থেকে কোরবানির পশুর হাটের তথ্য পাঠিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে পশু এলেও নেই ক্রেতা। ব্যাপারীরা ক্রেতার অপেক্ষায়। প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পশু ব্যবসায়ীরা। এখন অনেকটা মাথায় হাত ও কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের। ভর করেছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আতঙ্ক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবার নগরে ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমোদন দিয়েছে। এর সঙ্গে আছে তিনটি স্থায়ী পশুর হাট। নুর নগর হাউজিং কর্ণফুলী গরুর বাজারের ইজারাদার খোরশেদ আলম বলেন, ‘প্রতি বছর চাঁদ উঠলেই পশুর হাট বসে। এবার আবহাওয়ার কারণে বিলম্বে শুরু করা হচ্ছে। বাজারে এরই মধ্যে পশু এলেও নেই ক্রেতা। আবহাওয়ার যে অবস্থা, তাতে আমরা চিন্তায় পড়ছি।’ গলিচিপা পাড়া বারনিঘাটা রোডসংলগ্ন মাঠের ইজারাদার জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কোরবানির পশু আছে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। এখন আমরা ক্রেতার অপেক্ষায়। বৈরী আবহাওয়া আমাদের এখন চিন্তার প্রধান কারণ।’
চট্টগ্রামের অস্থায়ী পশুর হাট হলো বাকলিয়ার নূর নগর হাউজিং এস্টেট মাঠ, পূর্ব হোসেন আহমদ পাড়া সাইলো রোডের পাশের খালি টিএসপি মাঠ, মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ওয়াজেদিয়া মোড়, আউটার রিং রোডের সিডিএ বালুর মাঠ, মধ্যম হালিশহর মুনির নগর আনন্দ বাজারসংলগ্ন রিং রোডের পাশের খালি জায়গা, রেলস্টেশনসংলগ্ন খালি মাঠ ও বাটাফ্লাই পার্কের উত্তরে চেয়ারম্যান মাঠ। এ ছাড়া রয়েছে সাগরিকা বাজার, বিবিরহাট বাজার ও পোস্তারপাড় ছাগলের হাট।
বরিশাল : বরিশাল নগরীসহ জেলার সব উপজেলায় কোরবানির পশুর হাটে বেচাবিক্রি শুরু হয়নি। আজ থেকে পুরোদমে বেচাবিক্রি শুরু করার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তালতলী বাজারের অস্থায়ী হাট বুধবার থেকে শুরু হয়ে চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। বরিশালের সবচেয়ে বৃহৎ হাট বসবে সদর উপজেলার চরমোনাই এলাকায়। চরমোনাই দরবার পরিচালিত এ হাট মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে বলে জানা গেছে।
রাজবাড়ী : জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া হাটে গরু নিয়ে আসছেন রফিকুল ইসলাম। নিজ খামারের তিনটি গরু হাটে তুলেছেন তিনি। বিকাল পর্যন্ত কোনো গরু বিক্রি করতে পারেননি। বেশির ভাগ গরুর দাম দেড় লাখ টাকা চেয়েছেন। ক্রেতারা ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি দাম বলছেন না। এ নিয়ে হতাশ তিনি।
রফিকুলের মতো অন্য খামারিদের দাম নিয়ে একই অভিযোগ। এই হাটে আসা বেশির ভাগ বিক্রেতাই হতাশ। তারা বলছেন, হাটে অনেক গরু আসছে। সেই তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম। তাই প্রত্যাশানুযায়ী দাম বলছে না কেউই।
মেহেরপুর : স্বাদে-গুণে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংসর খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। তাই কোরবানির ঈদ এলেই ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল কিনতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা ভিড় জমান বৃহত্তর কুষ্টিয়ার সর্ববৃহৎ শতবর্ষী বাড়াদি হাটে। ঈদ সামনে রেখে জমে উঠেছে মেহেরপুরের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের হাট। ১০ হাজার থেকে সোয়া লাখ টাকা দামে ছাগল পাওয়া যাচ্ছে এই হাটে। তবে বড় ছাগলের তুলনায় মাঝারি ছাগলের চাহিদা বেশি বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ক্রেতারা ট্রাক বোঝাই করে ছাগল নিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অভিযোগ প্রতি হাটে কোটি টাকার ওপরে বিক্রি হলেও হাটে নেই কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা তারা পুলিশি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
নড়াইল : নড়াইলে কোরবানির পশুর হাটে কেনাবেচা জমে উঠেছে। কোরবানিযোগ্য গরু-ছাগল ন্যায্য দামে কিনতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন এ বছর দাম কম। ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে ৫৪ হাজার ৫৮৫টি গবাদিপশু। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও ১৪ হাজার ৬৯টি উদ্বৃত্ত পশু বিক্রি করা যাবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ভারতীয় গরু ছাড়াই জমে উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশুর হাটগুলো। সীমান্তবর্তী হাটসহ জেলার সব হাটেই এবার দেশীয় গরুর সরবরাহ অনেক। ভারতীয় গরু একেবারেই নেই। তাই হাটগুলোতে দেশীয় গরু বেচাকেনা চলছে। তবে এবার কোরবানির গরুর দাম গত বছরের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে গরু। তবে মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।