অস্ত্রবিরতি শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে তা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে প্রতিবেশী থাইল্যান্ড। নম পেন ‘সচেতনভাবে’ অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ ব্যাংককের। সোমবার মালয়েশিয়ার পুত্রাজায়ায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার পর অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। তারা নিজেদের মধ্যে সংঘাত বন্ধ ও সরাসরি যোগাযোগ পুনরায় শুরুর ব্যাপারেও সম্মত হয়। এর আগে সীমান্তজুড়ে পাঁচ দিনের তুমুল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৪০ জন নিহত ও ৩ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, মধ্যরাতে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার পর বিরোধপূর্ণ সীমান্তে লড়াই বন্ধ হয় আর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। এতে কাছাকাছি এলাকার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা ফিরে আসতে শুরু করেন।
এর মধ্যে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী অভিযোগ করেছে, গতকাল ভোরে কম্বোডিয়ার সেনারা সীমান্তের অন্তত পাঁচটি এলাকায় হামলা চালিয়ে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এদিকে কম্বোডিয়া অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী টি সেইহা এক বিবৃতিতে বলেছেন, তাদের সেনারা মধ্যরাত থেকে অস্ত্রবিরতি কঠোরভাবে মেনে চলছেন আর তা অব্যাহত থাকবে। থাই মেজর জেনারেল উইনথাই সুবারি সাংবাদিকদের জানান, এখন পর্যন্ত আলোচনায় যারা যুক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে থাইল্যান্ডের সেকেন্ড রিজিয়ন আর্মির নেতৃত্বাধীন জেনারেল ও তার কম্বোডীয় কাউন্টারপার্ট আছেন। তিনি জানান, সীমান্ত বৈঠকে কমান্ডাররা অস্ত্রবিরতি বজায় রাখতে সব ধরনের সেনা মুভমেন্ট বন্ধ করতে এবং নিহত ব্যক্তিদের মৃতদেহ ও আহতদের ফিরিয়ে দিতে সম্মত হন। উইনথাই বলেন, যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য উভয় পক্ষ চারজনের একটি সমন্বিত টিম তৈরি করবে।
কম্বোডিয়ার জাতীয় পরিষদের বৈদেশিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কমিশনের মহাপরিচালক লিম মেঙহর জানান, উভয় সামরিক বাহিনীই তাদের বিরোধপূর্ণ সীমান্ত বরাবর আর অতিরিক্ত কোনো সেনা মোতায়েন না করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও দরকার বলে মনে করেন তিনি। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘(মালয়েশিয়ায়) গতকালের বৈঠকে যেসব চুক্তি ও শর্তে সমঝোতা হয়েছে সেগুলো পর্যবেক্ষণই মূল বিষয়।’ ব্যাংককে থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাই ওয়েচায়চাই জানান, তার সরকার কম্বোডিয়ার কথিত অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের বিষয়ে মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকায় এখন শান্তি ফিরে এসেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, সংঘাতপূর্ণ সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডর সিসাকেত প্রদেশের কানথারালাক জেলায় স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য আবার ফিরে এসেছে। এই সীমান্তে থাই ও কম্বোডিয়া সবচেয়ে বেশি সেনা মোতায়েন করেছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা ছাইয়া ফুমজারোন (৫১) জানান, অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়েছে, খবরে এমনটি শোনার পর গতকাল সকালে নিজের দোকান খোলার জন্য তিনি শহরে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘অস্ত্রবিরতি হওয়ায় আমি খুব খুশি। তারা যদি লড়াই অব্যাহত রাখত তাহলে আমাদের আয় করার কোনো উপায় থাকত না।’
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার যুদ্ধবিরতিতে স্বাগত জানাল বাংলাদেশ : চার দিনের বেশি সময় ধরে পাল্টাপাল্টি হামলার পর সোমবার ‘তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত’ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশীর যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।
গতকাল এক বিবৃতিতে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়েছে, কোনো শর্ত ছাড়া থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ায় বাংলাদেশ স্বাগত জানায়। সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনার মধ্যস্থতার জন্য আসিয়ান চেয়ার মালয়েশিয়ার প্রশংসা করছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া, এ যুদ্ধবিরতিতে থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার অন্য যেসব বন্ধুর ভূমিকা রয়েছে তাদেরও প্রশংসা করছে বাংলাদেশ।