দক্ষিণ এশিয়ার কোনো ক্লাবেরই নিজস্ব স্টেডিয়াম নেই। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসই ব্যতিক্রম। পেশাদার ফুটবলে দলটির আগমন ২০১৮-১৯ মৌসুমে। অথচ ২০২১-২২ মৌসুমেই তারা হোম ভেন্যু হিসেবে স্টেডিয়াম গড়ে তোলে; যা কিংস অ্যারিনা নামেই পরিচিত। বাংলাদেশের ক্লাবগুলো হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করতে জেলা স্টেডিয়ামকে বেছে নেয়। কিংস বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মনোরম পরিবেশে স্টেডিয়াম গড়ে একের পর এক ম্যাচ খেলে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার ক্লাবগুলোকেও হোম ভেন্যু খুঁজতে যাযাবরের মতো ঘুরতে হয়। কিংস অ্যারিনা শুধু কিংসের হোম ভেন্যু নয়, বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য আদর্শ এক ভেন্যু। ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়াম ছাড়া বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনার সঙ্গে অন্যদের কি তুলনা চলে? ঘরোয়া আসরে এমন কোনো ফুটবল নেই যে বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় হয়নি। শুধু কি তাই, জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো এখানে হচ্ছে। এএফসি ক্লাব কাপের আয়োজনও হয়েছে। অনুষ্ঠিত হয়েছে ফিফা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক নারী প্রীতি ম্যাচ। দক্ষিণ এশিয়ায় যা ঘটেনি তা ঘটিয়ে অল্প দিনের মধ্যে চমক দেখিয়েছে বসুন্ধরা কিংসের অ্যারিনা। আস্থার নামই কিংস অ্যারিনা। ফিফা, এএফসির কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসে কিংস অ্যারিনার প্রশংসাও করে গেছেন।
এত প্রশংসা, এত আয়োজন। তার পরও কিংস অ্যারিনা ঘিরে বিশেষ কিছু মহলের অপতৎপরতা ক্রীড়ামোদীদের বিস্মিত করেছে। কেন করেছে তা নিজেরাও জানেন না। ফুটবল তো উত্তেজনার খেলা। এখানে সমর্থকদের মধ্যে হট্টগোল বা সংঘর্ষ হতেই পারে। ফুটবলে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল তখন ঢাকা স্টেডিয়ামে কত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তা ভুলবার নয়। নিহতও হয়েছেন কয়েকজন দর্শক। কিংস অ্যারিনায় তো এমন অপ্রীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়নি। উত্তেজনার মধ্যে ধাক্কাধাক্কি এই যা। আর এগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তো নিরাপত্তারক্ষীদের। অযথা ভেন্যুর দোষ পড়বে কেন? কিছু ক্লাব এমন হাস্যকর অভিযোগও তুলেছে। শুধু তাই নয়, কিংস অ্যারিনায় না খেলার হুমকিও দিয়েছে। পেশাদার লিগে তো বিভিন্ন ভেন্যুতে এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে। সেখানে শুধু কিংস অ্যারিনাকে আলাদাভাবে দেখা হচ্ছে কেন? এর পেছনের রহস্যটা কী? অবাক লেগেছে ডিসিপ্লিনারি কমিটির এক সিদ্ধান্তে। তারা বলেছে, কিংস অ্যারিনাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ভবিষ্যতে হট্টগোল হলে তারা কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে। প্রশ্ন হলো-কে বা কারা অভিযোগ তুলল আর এতেই ডিসিপ্লিনারি কমিটি এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিল! তারা কি পারে এমন সিদ্ধান্ত নিতে? হট্টগোলের নালিশ, কতই না অভিযোগ; তার পরও ফুটবলারদের প্রধান পছন্দ কিংস অ্যারিনা। ১০ জুন ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের ম্যাচ। তারাও অনুশীলনের মাঠ হিসেবে কিংস অ্যারিনা বেছে নিয়েছে। গতকাল অবশ্য ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলন করে কয়েক ঘণ্টা। এর আগে কয়েক ঘণ্টা অনুশীলন করে হামজা দেওয়ান চৌধুরী কিংস অ্যারিনার প্রশংসা করেছেন। খেলোয়াড়দের ফার্স্ট চয়েজ যখন কিংস অ্যারিনা তখন ক্লাবগুলো যতই কূটকৌশল করুক না কেন, লাভ হবে কি? ভেন্যু হিসেবে বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনা যেমন সবার পছন্দের, তেমন কিংস অ্যারিনার অনুশীলন মাঠও সবার মনে ধরেছে। এর মধ্যে আবার সুখবর হচ্ছে জুলাইয়ে কিংস অ্যারিনাতেই বসতে যাচ্ছে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের প্রথম পছন্দ কিংস অ্যারিনা।
আরেকটি খবর হয়তো অনেকে জানেন না। তা হলো ওয়েস্ট বেঙ্গল ফুটবল ফেডারেশন আইএফএ শিল্ডের যৌথ আয়োজক হতে চেয়েছিল কিংস অ্যারিনার সঙ্গে। সময়স্বল্পতার কারণে তা হয়নি। অল্প দিনেই কিংস অ্যারিনার খ্যাতি যে ছড়িয়ে পড়েছে, এ নিয়ে কি সংশয় আছে?