যুক্তরাষ্ট্রে ঘৃণামূলক অপরাধের মাত্রা ২০২০ এবং ২০২১ সালে ১২ শতাংশ বেড়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানিয়েছে। করোনায় গৃহবন্দিত্ব চলাকালেও ধর্ম, বর্ণ, জাতিগত বিদ্বেষের ঘটনা আমেরিকায় বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবিকতার ক্ষেত্রে অকল্পনীয় অবনতি ঘটেছে বলে মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারকর্মীরা মন্তব্য করেছেন।
এফবিআইয়ের সোমবার প্রকাশ করা তথ্যকেও অধিকারকর্মীরা সঠিক বলে মনে করছেন না। কারণ, বিদ্বেষমূলক অনেক ঘটনাই পুলিশের নজরে আসে না। পক্ষপাতমূলক সহিংসতার তথ্য পুলিশকে জানানোর পর ভুক্তভোগীরা পুনরায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে।
এফবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, বছরের পর বছর গুরুতর অপরাধের ঘটনা যে বেড়েই চলেছে, তা দৃশ্যমান হলো। বিশেষ করে বর্ণ, জাতিগত, ধর্ম, লিঙ্গ, অক্ষমতা , যৌন-সম্পর্কিত অপরাধের মাত্রা ক্রমান্বয়েই বেড়ে চলছে। এফবিআই হেইট ক্রাইমের পরিসংখ্যান ডিসেম্বরে প্রকাশ করেছে। কিন্তু সেটি প্রকৃত তথ্যে সমৃদ্ধ হতে পারেনি। কারণ, নিউইয়র্ক সিটি, লসএঞ্জেলেসসহ ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন সিটি অপরাধের তথ্য সাবমিট করতে পারেনি জাতীয় পর্যায়ের সর্বাধুনিক সিস্টেমে।
স্টেট, সিটি, কাউন্টি পর্যায়ের নতুন তথ্য সন্নিবেশ করার পর জানা গেছে যে, ২০২০ সালে ৮ হাজার ১২০টি হেইট ক্রাইমের ঘটনা ঘটে। পরের বছর ২০২১ সালে সে সংখ্যা বেড়ে ৯ হাজার ৬৫ তে দাঁড়ায়। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। ৮ হাজার ৩২৭টি হেইট ক্রাইমের মধ্যে ৫৫ শতাংশ ছিল নিগৃহীত করার, ১৮টি হত্যা, ১৯টি ধর্ষণের ঘটনা। ৪৩ শতাং ছিল ভয় দেখানো অর্থাৎ বাড়ি, দোকান, অফিস, গাড়িতে হামলা অথবা সম্পদের ক্ষতিসাধন করা।
বিচার বিভাগের সহযোগী এটর্নী জেনারেল ভ্যানিটা গুপ্ত এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে জানান, এদেশে হেইট ক্রাইমের স্থান নেই যা কম্যুনিটির শান্তি বিনষ্ঠ করে। বিচার বিভাগ সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে এসব অপরাধ প্রতিরোধ করতে। গুপ্ত উল্লেখ করেন, হেইট ক্রাইম কমিয়ে ফেলতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সাহায্য নেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তির। হেইট ক্রাইমের যে তথ্য এফবিআইকে দেওয়া হয়েছে তার ৬৪ শতাংশ ঘটেছে ভুক্তভোগীর প্রতি বর্ণ অথবা জাতিগত বিদ্বেষের কারণে। ধর্মীয় কারণে হেইট ক্রাইম সংঘটিত হয়েছে ১৪ শতাংশ।
সমগ্র আমেরিকান সিটিসমূহে হেইট ক্রাইমের ওপর মনিটরিং চালায় স্যান বার্নারডিনোতে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘সেন্টার ফর স্টাডি অব হেইট এ্যান্ড এক্সট্রিমিজম’। এই সংস্থার পরিচালক ব্রায়ান লেভিন বলেন, এফবিআইয়ের প্রকাশিত পরিসংখ্যানটি উদ্বেগজনক হলেও এটাকে কেউই তেমন গুরুত্বের সাথে দেখছে না। আর এ কারণে আমরা এমন একটি নতুন পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যেখানে মানবিকতা ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে। এফবিআইয়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের পর ব্রায়ান লেভিন বলেন, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে কৃষ্ণাঙ্গরা-২১ শতাংশ। জিউস-১৬ শতাংশ এবং সমকামী ১২ শতাংশ, শ্বেতাঙ্গ, এশিয়ান এবং ল্যাটিনোদের হার ৮ শতাংশ।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল