ইরানকে হুমকি দেওয়ার আগে শত্রুরা এখন শতবার চিন্তা করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট (আইআরজিসি)। গতকাল মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির উপস্থিতিতে প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মোড়ক উন্মোচন করেছে আইআরজিসি।
ইরানের প্রতিরক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র শিল্প দেশীয় প্রযুক্তির ভিত্তিতে গড়ে উঠছে তা উল্লেখ করে এ দিন প্রেসিডেন্ট রায়িসি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের প্রতিরোধ ক্ষমতা এই অঞ্চলের দেশগুলোতে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিরক্ষা এবং ক্ষেপণাস্ত্র শিল্প ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিসম্পন্ন হয়ে উঠেছে এবং ইরান যেহেতু অস্ত্র আমদানি করে না সে কারণে এইসব কারখানার উন্নতি হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনাও নেই।
ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রের মোড়ক উন্মোচন সম্পর্কে এক টুইট বার্তায় ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অ্যারোস্পেস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল হাজিজাদেহ লিখেছেন, মঙ্গলবারের সূর্যোদয় অন্যদিনের মতো সাধারণ কোনো দিন নয়, আজ ফাত্তাহ নিয়ে সূর্য উদিত হয়েছে।
ফাতাহর হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্মোচন অনুষ্ঠানে জেনারেল হাজিজাদেহ বলেন, আজ যে ক্ষেপণাস্ত্রটি উন্মোচন করা হয়েছে তা বিশ্বের অনন্য একটি ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচনের সাথে সাথে ইরান এই প্রযুক্তির অধিকারী চারটি দেশের মধ্যে একটি হয়ে গেল।
তিনি আরও বলেন- বিশ্বে ট্যাঙ্ক, যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমানসহ সব অস্ত্র ধ্বংসের জন্যই পাল্টা ব্যবস্থা বা অস্ত্র রয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের জন্যও এখন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ইরানের তৈরি এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার মতো কোনো অস্ত্র এখন পর্যন্ত নেই।
এই ক্ষেপণাস্ত্রের গতি শব্দের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি- এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের গতির কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো একেবারেই অসম্ভব।
জেনারেল হাজিজাদে বলেন, ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১৪০০ কিলোমিটার। অ্যারোস্পেস ফোর্স এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে বসে থাকবে না বরং এ ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাওয়ার কাজ অব্যাহত রাখবে, যাতে কোনো শত্রু ইরানে হামলার চিন্তাও করতে না পারে।
হাইপারসনিক মিসাইল আধুনিকতম সামরিক অস্ত্রের মধ্যে অন্যতম উন্নত অস্ত্র যেগুলো আজ রাশিয়া এবং চীনের মতো দেশগুলোর মাধ্যমে উৎপাদিত এবং পরিচালিত হয়।
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এগুলোর বিকাশ ও ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে অসাধারণ জটিলতার কারণে বিশ্বের খুব কম দেশই তা পরিকল্পনা, উন্নত এবং এবং কার্যকরী করতে সক্ষম হয়েছে।
ইরানের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির অর্জন এবং এর কার্যকারিতা নিঃসন্দেহে আধুনিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে একটি সিদ্ধান্তমূলক এবং বৈপ্লবিক অগ্রগতি। এখন থেকে ইসলামি ইরানের শত্রুরা বিশেষ করে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী ইরানে হামলা চালানোর বিষয়ে তাদের হিসাব পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।
তেল আবিব শাসক গোষ্ঠী যারা সবসময় দাবি করে আসছে যে তারা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা মোকাবেলা করতে সক্ষম এখন ফাত্তাহ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মোকাবেল করতে তাদের অক্ষমতা স্বীকার করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। এটি এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র যা সর্বোচ্চ ৪০০ সেকেন্ডের মধ্যে অধিকৃত ফিলিস্তিনে পৌঁছে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।
মূলত, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অত্যন্ত মূল্যবান অস্ত্র। কারণ বর্তমানে তাদের আটকানো এবং ধ্বংস করার জন্য কোনও কার্যকরী এবং নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি নেই। পশ্চিমা দেশগুলো হাইপারসনিক মিসাইল মোকাবেলা করতে অক্ষম এবং পশ্চিমা অ্যান্টি-মিসাইল সিস্টেমগুলো এসব ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবেলা করতে স্পষ্ট অক্ষমত হয়েছে যেহেতু রাশিয়াই প্রথম হাইপারসনিক মিসাইল ব্যবহার করে ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করেছে।
পরিশেষে এটা অবশ্যই বলা যায় যে ইরানের মাধ্যমে হাইপারসনিক ফাতাহ ক্ষেপণাস্ত্রের উন্মোচন ও পরিচালনা সামরিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে যা যুদ্ধের ভাগ্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকবে এবং গেম চেঞ্চার হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। এই নতুন পরিবর্তনশীল ফাতাহ ক্ষেপণাস্ত্রের ফলে পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে ইরানের পক্ষে সামরিক ও অস্ত্র সমীকরণ পরিবর্তন করবে। ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে শত্রুরা এখন কয়েকবার চিন্তা করবে বলে সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সূত্র : পার্সটুডে।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক