যুদ্ধবিরতি চুক্তির কার্যকর হওয়ার একদিনের মধ্যেই দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ লেবাননের ছয়টি এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাংক থেকে হামলা চালানো হয়। ইসরায়েল দাবি করেছে, সেখানে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের উপস্থিতি দেখা গেছে। অন্যদিকে, লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ইসরায়েল।
গত বুধবার থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তি অনুসারে, দক্ষিণ লেবানন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এ সময়ে কোনো পক্ষই একে অপরের ওপর হামলা চালাতে পারবে না। তবে ইসরায়েলি হামলার পর চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলের ট্যাংক হামলায় মারকাবা এলাকায় দুজন আহত হয়েছেন। হামলার শিকার অন্যান্য এলাকা হলো ওয়াজানি, খিয়াম, তাইবে, কফারচৌবা এবং মারজাইউন। এসব এলাকায় এখনো ইসরায়েলি বাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে। পাশাপাশি, দক্ষিণ লেবাননের আকাশে ইসরায়েলের নজরদারি ড্রোন দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, বাস্তুচ্যুতদের নিজ ঘরে ফেরাতে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও ইসরায়েল সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের সেখানে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। লেবাননের পার্লামেন্ট স্পিকার নাবিহ বেরি জানিয়েছেন, দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দারা তাদের বাড়ি ফিরতে পারবেন। তবে এলাকাগুলোতে ইসরায়েলি উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুসারে, দক্ষিণ লেবাননে আজ থেকে লেবাননের সেনাবাহিনী এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। লেবাননের সেনাবাহিনী লিতানি নদীর দক্ষিণে টহল দিতে শুরু করেছে এবং বিভিন্ন তল্লাশিচৌকি স্থাপন করেছে। তবে ইসরায়েলি বাহিনী অবস্থান করা এলাকাগুলোতে এখনো তারা প্রবেশ করেনি।
দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দারা সেনা মোতায়েনকে স্বাগত জানিয়েছেন। কলায়া গ্রামে সেনা সদস্যদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। ‘আমরা শুধু লেবাননের সেনাবাহিনী চাই’ বলে স্লোগান দিয়েছেন খ্রিস্টান অধ্যুষিত এই গ্রামের বাসিন্দারা।
গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও লেবাননের সংঘাত নতুন করে শুরু হয়। গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে আক্রমণ চালায়। পাল্টা জবাবে ইসরায়েলও লেবাননে হামলা শুরু করে। গত সেপ্টেম্বর থেকে এ সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত লেবাননে ৩,৮০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক হামলা যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। এর ফলে সীমান্ত এলাকায় শান্তি ফেরানোর চেষ্টা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল