রাশিয়াকে জব্দ করতে ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ জরিমানা শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মূলত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। এতে ভারতীয় পণ্যে মার্কিন শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ৫০ শতাংশ, যা ভারতের অর্থনীতির জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবার ইরানকে কোণঠাসা করতে যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, তাতেও শেষ পর্যন্ত ভারতেরই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বাণিজ্যিক কারণে তো বটেই, কৌশলগত কারণেও ভারতের কাছে ইরানের চাবাহার সমুদ্রবন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১০ বছরের চুক্তিতে ইরানের সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে ওই বন্দর পরিচালনা করছে নয়াদিল্লি।
কিন্তু ইরানকে ‘কোণঠাসা’ করতে চাবাহার বন্দরে অন্য দেশগুলোকে দেওয়া নিষেধাজ্ঞার ছাড় প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ওই বন্দর ব্যবহার করলে জরিমানা (পেনাল্টি) দিতে হবে ভারত-সহ অন্য দেশগুলোকে।
গত মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, ট্রাম্প ইরানকে কোণঠাসা করতে চান। সেই নীতির সঙ্গে সামঞ্জ্য রেখেই চাবাহার বন্দর ব্যবহারে ফের জরিমানা ধার্য করতে চলেছে হোয়াইট হাউস। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে এই নীতি কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে ইরানের ওই বন্দর ব্যবহার করলে জরিমানা দিতে হবে অন্য দেশগুলোকে। এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরানের অবৈধ অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে ভাঙার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
গত জুন মাসে ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিকে ভেস্তে দিতে সেদেশের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হানা দেয় মার্কিন সেনাবাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে ইরান। আগামী দিনে তারা পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর তালিকায় নাম লেখাতে চায়। তাতে আপত্তি রয়েছে পেন্টাগনের। এই ঘটনার পরেই আমেরিকা-ইরান সম্পর্ক আরও তলানিতে নেমেছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান এবং পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছোনোর জন্য চাবাহার বন্দর ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৩ সালেই এই বন্দরকে নতুন ভাবে গড়ে তোলার জন্য তেহরানকে প্রস্তাব দিয়েছিল নয়াদিল্লি। ২০২৪ সালের ১৩ মে ১০ বছরের একটি চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী ইরানের বন্দর নৌ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে চাবাহার বন্দর পরিচালনা করবে ভারত। এই বন্দর ব্যবহার করেই পশ্চিম এশিয়া হয়ে রাশিয়া এবং ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে জলপথে বাণিজ্য করতে চায় ভারত। তাছাড়া এই বন্দরের মাত্র ১৪০ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পাকিস্তানের গ্বদর বন্দর। সেই বন্দর পরিচালনা করে থাকে বেইজিং। চাবাহার বন্দরের উপর ভারত নিয়ন্ত্রণ হারালে আরব সাগরে চীনের আধিপত্য বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্র জরিমানা চাপালে চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারতের পরিকল্পনা ধাক্কা খেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই প্রকল্পে অংশ নেওয়া সংস্থাগুলোও। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে
বিডি প্রতিদিন/একেএ