ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে একটি পরিকল্পনার আওতায় দুই ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সে অনুযায়ী, গাজার কিছু অংশে দ্রুতই পুনর্গঠন ও নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক ও ইসরায়েলি বাহিনী মোতায়েন করা হবে। তবে বাকি অংশ নিয়ে পুনর্গঠনের বিষয়ে কিছু জানায়নি, ধারণা করা হচ্ছে আপাতত বিধ্বস্ত অবস্থাতেই রাখা হবে।
মার্কিন প্রশাসন এই দুইটি অঞ্চলকে 'গ্রিন জোন' ও 'রেড জোন' নামে চিহ্নিত করবে। গ্রিন জোনে নতুন শহর ও পুনর্গঠন প্রকল্প চালু করা হবে। এখানে আন্তর্জাতিক ও ইসরায়েলি যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। রেড জোন মূলত যুদ্ধবিধ্বস্ত অংশ হিসেবে থাকবে, পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে না।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ইতোমধ্যে প্রায় সমস্ত গাজাবাসীকে রেড জোনে স্থানান্তরিত হয়েছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরো গাজা পুনর্গঠন করা সম্ভব হলে ভালো হতো, কিন্তু এটি বাস্তবায়ন কঠিন, সময়সাপেক্ষ।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিকল্পনা ও গাজার পুনর্গঠন নীতির দ্রুত পরিবর্তন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। গত মাসে ঘোষিত নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সমাধানে পরিণত হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, গাজা ফিলিস্তিনি শাসনের আওতায় থাকবে।
পরিকল্পনা দ্রুত পরিবর্তনে গাজার যুদ্ধসংক্রান্ত সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন তৈরি করেছে। আগের পরিকল্পনায় প্রায় দুই মিলিয়ন ফিলিস্তিনির জন্য খাদ্য, আশ্রয় ও সহায়তা প্রদানের উদ্যোগও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
মার্কিন প্রশাসন আগে 'অল্টারনেটিভ সেইফ কমিউনিটিস বা এএসসি নামে ছোট-ছোট ভাগে ভাগ করে ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে এই পরিকল্পনা এবার বাতিল করা হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তা জানান, এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রস্তাবিত ধারণা মাত্র। তারা ইতোমধ্যেই নতুন পরিকল্পনা শুরু করেছেন।
মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত সংস্থাগুলো, এএসসি মডেল নিয়ে আগেই উদ্বেগ জানিয়েছিল। তবে শুক্রবার পর্যন্ত পরিকল্পনার পরিবর্তন সম্পর্কে কোনো নোটিশ পায়নি তারা।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, গাজায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনী মেতায়েন, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও ব্যাপক পুনর্গঠন কার্যকর না হলে গাজা দুই বছরের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পরও অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গাজাকে দুই ভাগে বিভক্ত করার প্রস্তাবকে রাজনৈতিক ও ভূ-ভৌগলিকভাবে বিভাজনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই পরিকল্পনা মানবাধিকার, স্থানান্তরিত জনসংখ্যা ও নিজস্ব শাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এই প্রস্তাব সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসন বলেছে, এটি গাজার পুনর্গঠন ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়। তবে ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতোমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সূত্র: রয়টার্স
বিডি-প্রতিদিন/এমই