যৌতুক না পেয়ে বউ পিটিয়ে জেল খেটেছেন তিনি। যৌতুকলোভী এই কর্মকর্তাকে নির্বাচনের আগে বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) করেছে সরকার। জেলা প্রশাসককে জেলার আইনশৃঙ্খলাসহ ভূমিসংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম দেখভাল করতে হয়। সুনাম ও মর্যাদার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হয়। অথচ যার নিজের মধ্যে নৈতিকতা নেই, এমন কর্মকর্তাকে ডিসি করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এই কর্মকর্তার নাম খায়রুল আলম সুমন। তিনি ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তা। সদ্য বরিশালের ডিসি করা হয়েছে তাকে। যৌতুকের মামলায় কারাবাসের বিষয়ে জানতে চাইলে খায়রুল আলম সুমন বলেন, এসব আমার ব্যক্তিগত তথ্য। আমার নামে ডিপি (বিভাগীয় মামলা) ছিল, সবই কর্তৃপক্ষ জানে, জেনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি এসব নিয়ে কিছু বলব না।’ বর্তমানে তার ‘ব্যক্তিগত ডাটা শিটে’ (পিডিএস) নিজেকে ‘অবিবাহিত’ উল্লেখ করেছেন। সূত্র জানায়, সাবেক সচিব আবদুল মান্নানের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন খায়রুল। প্রবেশনার (শিক্ষানবিশ) হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাকরিজীবন শুরু করেন। সেখানে সে সময় ডিসি ছিলেন মো. আবদুল মান্নান। পরে আবদুল মান্নান নিজের মেয়ের সঙ্গে খায়রুলের বিয়ে দেন। পরবর্র্তীতে এই কর্মকর্তা চট্টগ্রাম ডিসি অফিসে ছিলেন। এ ছাড়া নাঙ্গলকোট, নিকলি ও বাজিতপুরের এসিল্যান্ডের দায়িত্ব পালন করেন। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী ও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ দুই উপজেলায় ইউএনও ছিলেন। তবে স্ত্রীর করা যৌতুক মামলার কারণে তার নামে বিভাগীয় মামলা হয়। এ কারণে নিয়মিত পদোন্নতি হয়নি। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর খায়রুল আলম সুমনের উপসচিব পদে পদোন্নতির আদেশ হলেও সেখানে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেখানো হয়েছে ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। জানা গেছে, তিনি ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিয়েছেন নিজেকে বঞ্চিত দাবি করে।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের এসিল্যান্ড থাকার সময় খায়রুল আলম সুমনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা হয়। ২০১৬ সালের এপ্রিলে এসিল্যান্ড থাকার সময় সেই যৌতুক মামলায় খায়রুল আলম সুমন ও তার মা খোদেজা বেগমকে কারাগারে পাঠান আদালত। সে সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর ওয়ারী থানার এসআই শাহ আলম তাদেরকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনও করেন। আর আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ পুলিশের ওই রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে তাদের জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড ও জামিন উভয় আবেদন নাকচ করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন। পরে লম্বা সময় তিনি কারাগারে থেকেছেন। মামলা করার পাশাপাশি জনপ্রশাসনেও অভিযোগ দেন স্ত্রী। পরে জনপ্রশাসন থেকে তার নামে বিভাগীয় মামলা হয়। স্ত্রীর করা মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের ৫ জুন খায়রুল আলমের সঙ্গে বিয়ে হয়। তারপর থেকে আসামিরা তার কাছে যৌতুক চেয়ে আসছিলেন। তারা তাকে নানাভাবে নির্যাতন করতেন। প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন করতেন। স্ত্রী মামলায় অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ রাতে ওয়ারী এলাকায় খায়রুলের বাসায় গরম খুন্তি দিয়ে ছেঁকা দেন তার মা। এ সময় খায়রুল তার স্ত্রীর হাত চেপে ধরেছিলেন। এ ঘটনার পরদিন ওয়ারী থানায় মামলা করেছিলেন স্ত্রী।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা জানান, সিভিল সার্ভিসে কর্মরত যে ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনে শৃঙ্খলা নেই তাকে জেলা প্রশাসক করা ঠিক হয়নি। এটা ইমেজের বিষয়। জেলা প্রশাসককে জেলার আইনশৃঙ্খলা ও ম্যাজিস্ট্রেসি দেখতে হয়। যে কেউ তাকে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি অস্বস্তিবোধ করবেন। জেলা প্রশাসকের সুনামটাই জরুরি।