নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময় নিয়ে দলগুলোতে মতভেদ থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে পিছিয়ে নেই কোনো দলই। বিশেষ করে বিএনপি তাদের ২৩৭ আসনে প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা ঘোষণার পর রাজধানী থেকে তৃণমূলে বদলে গেছে প্রচারণার দৃশ্যপট। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ প্রায় সব দলই প্রার্থী তালিকা অনেক আগেই ঘোষণা করে জনসংযোগ শুরু করেছে। আলোচিত রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দলীয় মনোনয়ন বিক্রি করছে। প্রচারণায় রয়েছেন তাদের প্রার্থীরাও। প্রায় প্রতিটি দলের চেয়ারম্যান বা আমির, সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিব প্রত্যেকে নিজ নিজ আসনে প্রচারণায় ব্যস্ত। সব মিলিয়ে দেশে ভোটের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, মূলত প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর সারা দেশে নির্বাচনি আমেজ দেখা দিয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিএনপি তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করায় নির্বাচনি মাঠে ভোটের উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে। সময় যত গড়াবে এটি আরও বাড়বে। এবার সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে মাঠের তৎপরতায় রাজনীতিতে ভোটের আমেজ চলে এসেছিল। যেটুকু সংশয় ছিল তা জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে। সনদ নিয়ে মতপার্থক্যে কোনো দল না শেষ পর্যন্ত বেঁকে বসে! তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির পর দলগুলোর মনোভাব এখন পর্যন্ত মোটাদাগে ইতিবাচক বলেই মনে হচ্ছে। দলগুলোও মনোযোগী হয়েছে ভোটের প্রচারে।
সরকার জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে বৃহস্পতিবার। বিএনপির দাবি অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন ও সনদ নিয়ে গণভোট একই দিনে হবে বলে সেখানে জানানো হয়েছে। অন্য কিছু বিষয়ে সামান্য আপত্তি থাকলেও দলটির পক্ষ থেকে সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়েছে। বিএনপি এখন ভোটে পুরোদমে মনোযোগী। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সব প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামী ভোটের আগেই গণভোট চেয়েছিল। তাদের সে দাবি পূরণ হয়নি। কিন্তু দলটির অন্য বড় দাবি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে (পিআর) সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের কথা আছে জুলাই সনদে। তাই কিছুটা আপত্তি জানালেও ভোটের মাঠে প্রচারণায় দেখা গেছে দলটির নেতাদের। তাদের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের শুক্রবার নির্বাচনি জনসভা করেছেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। জারি হওয়া জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ নিয়ে এখন পর্যন্ত বড় কোনো আপত্তি তোলেনি অপর দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, জুলাই সনদ আদেশ জারি, নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে দুই মাস ধরে আন্দোলনে আছে জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি সমমনা দল। তবে নির্বাচনের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এ মুহূর্তে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিতে চাই, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এ ব্যাপারে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সেজন্যই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য মাঠে কাজ করছি।’
পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীর নাম ঘোষণা, ইসির প্রস্তুতি এবং সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণার ফলে ভোট গ্রহণ এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর নির্বাচন কমিশন বলেছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে। দীর্ঘদিন মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এখন ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে উন্মুখ হয়ে আছে।
প্রাথমিকভাবে ঘোষিত বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারা জেলায় জেলায় করছেন পথসভা, জনসভা। প্রতিটি আসনেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর দলের নির্দেশ অনুযায়ী মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীসহ অনেক আসনেই সবাই মিলে ঘোষিত প্রার্থীর পক্ষে জনসংযোগে নেমেছেন।
এতে তৃণমূলে জনসংযোগ ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে গণজোয়ার দেখা যাচ্ছে। বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রাপ্ত অনেক আসনেই চূড়ান্ত মনোনয়ন লাভের জন্য অন্য প্রার্থীরাও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে বিএনপির আন্দোলনের শরিক দলগুলোর জন্য আসন চূড়ান্ত না হওয়ায় ওইসব আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের পাশাপাশি শরিক দলগুলোর প্রার্থীরাও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
৩০০ আসনে প্রাথমিকভাবে নিজ দলের প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারকাজ চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এ ছাড়া ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা করে প্রার্থী দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। দলটি বলছে, দাঁড়িপাল্লার বার্তা পৌঁছে দিতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন তাদের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা।
অন্যদিকে এনসিপি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ ও জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্য দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজ নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। শিগগিরই আসনগুলোতে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে এনসিপি। তবে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনে জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। মনোনয়ন বিক্রি চলছে। দলের নেতারা বলছেন, ৩০০ আসনেই একক প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর জনসংযোগ আরও জোরালো হবে।