চট্টগ্রামে খাদ্যপণ্যে ভেজাল কোনোভাবেই থামছে না। বেকারি, মিষ্টান্ন, রেস্টুরেন্টের খাবারসহ প্রায় সব ধরনের খাবারে কোনো না কোনো ভেজাল ও ক্ষতিকর উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। পচাবাসি উপকরণ ব্যবহার, নানান জাতের কেমিক্যাল ও ফুডকালার ব্যবহার থেকে শুরু করে এমন কোনো ভেজাল নেই যা করা হচ্ছে না। তদারকি সংস্থাগুলো প্রায়ই ভেজালবিরোধী অভিযান চালালেও নামমাত্র জরিমানা দিয়ে অভিযুক্তরা আবারও ভেজালের আশ্রয় নিচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো যাচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জেলা উপজেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশনের ভেজালবিরোধী অভিযানগুলো পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নানান উপায়ে অনিরাপদ হয়ে উঠছে খাদ্যপণ্য। কখনো ক্ষতিকর কেমিক্যাল, কখনো পচাবাসি উপকরণ, ধাতব পদার্থসহ নানান ধরনের ক্ষতিকর অখাদ্য ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে নানাজাতের খাদ্যপণ্য। আবার নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি করে সেগুলোকে মানবস্বাস্থের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তদারকি সংস্থাগুলো প্রতি মাসে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলাগুলোতে শতাধিক ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে অতি মুনাফার জন্য খাদ্যে অনিরাপদ উপকরণ ব্যবহারের নানান চিত্র উঠে আসছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের শুধু আর্থিক জরিমানা করা হয়। ফলে একেকটি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি দীর্ঘদিন ভেজাল খাদ্য বিক্রি করে অতি মুনাফা করে নামমাত্র আর্থিক জরিমানায় পার পেয়ে যাচ্ছেন। পরে আবারও ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করছেন। এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান হচ্ছে। দোষীদের শাস্তিরও আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু জনবল সীমিত হওয়ায় অভিযুক্তদের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি করা কঠিন। এজন্য অন্যান্য তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয় হওয়া উচিত। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের আরও অনেক দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভেজালের মূল কারণই হচ্ছে অল্প খরচে বেশি লাভ করা। খাদ্যকে দর্শনীয় করে তুলতে, কৃত্রিমভাবে স্বাদ বাড়াতে এসব ভেজাল উপকরণ ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় ভোক্তারাও নিরাপদ খাদ্যের চেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও চিত্রাকর্ষক খাদ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি থেকে উন্নতির জন্য সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি ভোক্তাদেরও ভেজাল খাদ্য নিয়ে সচেতন থাকা উচিত।
চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে কর্মরত ডা. রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, সুস্থ শরীরে প্রধান শর্তই হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য। কিন্তু হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলোতে কেমিক্যাল, ক্ষতিকর রং মিশ্রিত খাবার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি ও পুরোনো খাবার বিক্রির কারণে খাদ্যগ্রহীতারা দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসার, লিভারসহ নানান শারীরিক জুটিলতায় ভুগতে পারেন। এজন্য প্রশাসনের নজরদারি ও শাস্তির পরিমাণ আরও কঠিন হওয়া উচিত।