হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তারের জন্য শর্টসার্কিট হয়েছে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাটির তদন্তে উঠে এসেছে গত কয়েক বছরে কার্গো ভিলেজে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ সব ধরনের আধুনিক সুযোগসুবিধা বাড়ানো হলেও পুরোনো বৈদ্যুতিক তার পরিবর্তন করা হয়নি। ফলে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ভোল্টেজে বিদ্যুৎ প্রবাহে তার থেকে শর্টসার্কিট হয়েছে। আর চারপাশে ফাঁকা জায়গা হওয়ায় অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি না হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কার্গো ভিলেজের ভিতরের প্রায় পুরো জায়গায় থাকা স্টিলের কাঠামোর কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ সময় লাগে। কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির এক সদস্য এসব তথ্য জানিয়েছেন। তদন্ত কমিটির সুপারিশে বিমানবন্দরের জন্য আন্তর্জাতিক মানের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মান ঠিক করতে গেলেই সব অসংগতি দূর হয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কমিটির সদস্যরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির ওই সদস্য আরও বলেন, কার্গো ভিলেজে শুধু যে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা ছিল তা নয়, সেখানে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল রাখা হলেও ভেন্টিলেশন সিস্টেম ছিল না বললেই চলে। অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল দায়সারা। আর স্টিলের কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা, যা কেটে কেটে আগুন নির্বাপণ করতে হয়। অর্থাৎ স্টিলের কাঠামো দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বানিয়ে ফেলা হয়েছিল কার্গো ভিলেজকে। তদন্ত রিপোর্টে বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কোনো ফরেনসিক ল্যাব না থাকায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতার ওপর নির্ভর করে তদন্ত রিপোর্টটি বানানো হয়েছে। সেখানে কী কী পণ্য ছিল, কাস্টম থেকে সেই তালিকা না দেওয়ায় রিপোর্টে ক্ষয়ক্ষতির সুনির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির সভাপতি ও সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তদন্ত রিপোর্ট মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ডিজির মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা হবে। আমরা তদন্তে যা পেয়েছি, তা রিপোর্টেই উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্ত কমিটি দেখেছে, কার্গো ভিলেজের উত্তর-পশ্চিম পাশের স্কাই ক্যাপিটাল লাউঞ্জের পাশে কুরিয়ারের অফিস থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। দুপুর সোয়া ২টার দিকে সেখানে ধোঁয়া দেখা যায়। ২ মিনিটের মধ্যেই পুরো ঘর আগুনের ধোঁয়ায় ভরে যায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কার্গো কমপ্লেক্সের কাছে পর্যাপ্ত ফায়ার হাইড্রেন্ট পয়েন্ট ছিল না। এমন প্রেক্ষাপটে পানি আনতে হয় দূরের জায়গা থেকে। ঘটনার সময় কুরিয়ার ভবনে কেউ ছিলেন না। শনিবার হওয়ায় দুপুর দেড়টার মধ্যে অফিসগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে কার্গো ভিলেজের বিভিন্ন সেকশনে ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকলেও ব্যবহার হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১৮ অক্টোবর দুপুরে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে। আর নির্বাপণে সময় লাগে ২৭ ঘণ্টা। এরপর ফায়ার সার্ভিস, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে কোর কমিটি গঠন করা হয়। বেবিচক ও বিমান বাংলাদেশের তদন্ত রিপোর্টেও শর্টসার্কিটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।