শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
জাতিসংঘের প্রতিবেদন উইঘুর নিয়ে

জিনজিয়াংয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে

চীনে উদ্বেগজনকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর মারাত্মক মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার হয়েছে। এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ করল জাতিসংঘ। বুধবার প্রায় মধ্যরাতে অবসরগ্রহণের ঠিক ১৩ মিনিট আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটির হাইকমিশনার মিশেল ব্যালেট এই রিপোর্ট প্রকাশ করেন। যা ঘিরে ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের আমলে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। মিশেল ব্যালেটের কথায়, ‘আমি ভেবেছিলাম আমার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনব। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি চীনে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে চলে গেছে। স্থানীয় এবং উচ্চস্তরে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’ তিনি জানিয়েছেন জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর মারাত্মক অত্যাচার হয়েছে। যা সম্পূর্ণরূপে মানবতার পরিপন্থী। উল্লেখ্য, চীনে উইঘুর মুসলিম জাতির মানুষের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে উঠে আসছে। প্রায় ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটক করা হয়েছে বলে রিপোর্টে প্রকাশ হয়েছে। একে পশ্চিমা দেশগুলোর ‘সাজানো প্রহসন’ আখ্যা দেওয়া চীন প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ‘সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ পেয়েছেন। সংখ্যালঘুদের অধিকার দমন ও ‘নির্বিচারে আটকের ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠিত করতে চীন জাতীয় নিরাপত্তার ভুয়া অজুহাতকে কাজে লাগাচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন তারা। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শি জিন পিংয়ের আমলেই উইঘুর মুসলিমদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। তাদের ওপর লাগাতার অত্যাচার হয়েছে। জিনজিয়াংয়ে ভকেশনাল এডুকেশন এবং ট্রেনিং সেন্টারের আড়ালে আদতে উইঘুরদের নির্যাতন করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, লিঙ্গ নির্বিশেষে যৌন নির্যাতন, মানসিক হেনস্তা, ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে অত্যাচার, বলপূর্বক মেডিক্যাল সার্জারির মতো অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন উইঘুর মুসলিমরা।

মিশেল চার বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পুরো মেয়াদকালেই উইঘুরদের ওপর চীনের নিপীড়ন সংক্রান্ত অভিযোগ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। জিনজিয়াংয়ে ‘জাতিগত বিলোপসাধনের’ অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে বলে ব্যাশেলেটের কার্যালয় বছরখানেকেরও বেশি সময় আগে ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ বারবার পিছিয়েছে।

বেইজিং প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে আসা কথাবার্তা চেপে যেতে ব্যাশেলেটকে চাপ দিচ্ছে বলে পশ্চিমা অনেক মানবাধিকার সংগঠন বেশ কিছুদিন ধরে অভিযোগও করছিল।

এমনকি যখন প্রকাশিত হয়েছে তার কিছুক্ষণ আগেও প্রতিবেদনটি যেন প্রকাশ না করা হয়, সেজন্য চীন ব্যাশেলের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিল। প্রতিবেদনটি ‘প্রকাশ করতে বা না করতে ব্যাপক চাপের মুখে’ থাকার কথা গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাশেলে স্বীকারও করে নিয়েছিলেন। প্রতিবেদন প্রকাশে দেরির সাফাইও গেয়েছেন তিনি। বলেছেন, প্রতিবেদনটি নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে চাওয়ার অর্থ এই নয় যে এর বিষয়বস্তুর ব্যাপারে ‘আমি চোখ বুজে ছিলাম’। চীন বলছে, তারা শিনজিয়াংযে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা সন্ত্রাসবাদ রুখতে এবং ইসলামী জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটনে দরকার।

সর্বশেষ খবর