সিলেট থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাসাবাড়ি কিংবা অজ্ঞাত স্থানে কয়েকদিন চোরাই বাইক লুকিয়ে রাখা হয়। এরপর খোঁজা হয় ক্রেতা। নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রেতা জোগার করে বিক্রি করা হয় চোরাই মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেল চুরি ও বিক্রিতে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চোরদের শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ওই সিন্ডিকেট সিলেট থেকে ১০-১৫টি বাইক চুরি করেছে। এমন একটি নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশ। তিনটি চোরাই মোটরসাইকেলসহ চোরচক্রের ছয় সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, ওই নেটওয়ার্কের সিলেটের সদস্যরা প্রথমে টার্গেট করে দামি মোটরসাইকেল। এরপর পিছু নেয় মালিকের। পরে তথ্য দেওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদস্যদের। এরপর থেকে চুরির জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে নেটওয়ার্কের সদস্যরা। বাইকের মালিকের বাসা, কর্মস্থল ও গতিবিধির দিকে নজর রাখতে থাকে তারা। সুযোগ বুঝে বাইক নিয়ে হয়ে যায় হাওয়া। চুরির পর মোটরসাইকেল সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
সূত্র জানায়, বেশির ভাগ সময় চুরির কাজটি স্থানীয় চোরেরা করে থাকে। এরপর হাত বদল করে তারা সেটি পাঠিয়ে দেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মাঝে-মধ্যে সিন্ডিকেটের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদস্যরাও সিলেটে এসে ‘অপারেশন’ করে থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদস্যদের মূল দায়িত্ব থাকে চোরাই মোটরসাইকেল নিরাপদে রেখে বিক্রি করা। এ জন্য মূল হোতারা নিজেদের লোকদের দিয়ে ক্রেতা সংগ্রহ করে। মাঝে-মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চুরি করা মোটরসাইকেল ওই সিন্ডিকেট পাঠিয়ে দেয় সিলেটে। পরে সিলেটের সিন্ডিকেট সদস্যরা চোরাইবাইক সিলেট ও সুনামগঞ্জে বিক্রি করে থাকে। পুলিশ জানায়, গত ১৫ মে সকালে সিলেট নগরীর সোবহানীঘাটের কাছে বাসা থেকে পোল্যান্ড প্রবাসী নাজমুল ইসলামের ‘ইয়ামাহা এফজেডএস ভি৩’ মোটরসাইকেলটি চুরি হয়। বিষয়টি পুলিশকে জানান প্রবাসী নাজমুল। এরপর পুলিশ চোরচক্রটি শনাক্তে মাঠে নামে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পুলিশ সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। অবশেষে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক দীপরাজ ধর প্রিন্সের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঈদের কয়েক দিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে অভিযান চালায়। সেখান থেকে প্রবাসী নাজমুলের চুরি হওয়া বাইকসহ তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাইক চোর সিন্ডিকেটের ছয় সদস্যকে। চোর সিন্ডিকেটের আটক সদস্যরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চান্দুরা গ্রামের আজিজুল ইসলাম, আবুল কালাম, প্রণয়ন দাস, সাইফুজ্জামান, রেজাউল করিম ও লোটন চৌধুরী।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী এসআই দীপরাজ ধর প্রিন্স জানান, প্রবাসী নাজমুল ইসলামের চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধারে নেমে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া চোর সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরা সিলেটে এসে চুরি করে মোটরসাইকেল ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে যেত। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার, অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এক অভিযানে চোর সিন্ডিকেটের ছয় সদস্যকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওই সিন্ডিকেট সিলেট থেকে বাইক চুরি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যেত। পরে সেখানে বিক্রি করত।