‘বাংলাদেশ কোনো দিন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলবে, এমন স্বপ্ন কি দেখা যায়?’ প্রশ্নটি শুনে অবাক হননি বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। বাস্তবতা বুঝে তিনি মুচকি হাসেন। এরপর খুবই ধীরস্থির কণ্ঠে উত্তর দেন টাইগার টেস্ট অধিনায়ক, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল তো অনেক বড় স্বপ্ন। এত দূরে যদি আমি এখনই চিন্তা করি, তাহলে আমার মনে হয় বোকামি হবে। অল্প অল্প করে যদি এগোতে পারি তাহলে ভালো। কারণ, আপনি যদি দেখেন, প্রথম চক্রে আমরা ১টি ম্যাচ জিতেছিলাম। দ্বিতীয় চক্রে আমরা ১২ ম্যাচে ৪টি ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে যে এই চক্রে কীভাবে আরও ১-২টা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ২ টেস্ট ম্যাচ সিরিজ দিয়ে শুরু হচ্ছে ২০২৫-২৭ চক্রের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। লর্ডসে গত চক্রের ফাইনাল খেলছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলবে। প্রথমে খেলবে ২ টেস্ট ম্যাচ সিরিজ। এরপর ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ ও সবার শেষে ৩ ম্যাচ টি-২০ সিরিজ। টেস্ট সিরিজ খেলতে আজ ঢাকা ছাড়বেন অধিনায়ক নাজমুলসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। গতকাল ঢাকা ছেড়েছেন ইবাদত হোসেন, নাহিদ রানাসহ বেশ কয়েকজন। শ্রীলঙ্কা সফরে প্রথম টেস্ট ১৭-২১ জুন গলে। কলম্বোয় দ্বিতীয় টেস্ট ২৫-২৯ জুন। দুই দেশ এর আগে পরস্পরের বিপক্ষে ২৬টি টেস্ট খেলেছে। বাংলাদেশের জয় সাকুল্যে ১টি। হার ২০টি এবং ড্র ৫টি। দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট জয়টি ২০১৭ সালে, নিজেদের শততম টেস্টে। কলম্বোর টেস্টটি টাইগাররা জিতেছিল ৪ উইকেটে। টাইগাররা সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফর করেছিল ২০২১ সালে। ২ টেস্ট ম্যাচ সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। গত বছর মার্চে ঘরের মাটিতে ২ টেস্ট ম্যাচ সিরিজ খেলে হেরে যায় টাইগাররা। গত চক্রে যে ৪টি টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। দুটি ছিল পাকিস্তান এবং বাকি দুটির একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অন্যটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এবারও টাইগার অধিনায়ক একাধিক টেস্ট ম্যাচ জিততে চান। সেটা আগের চক্রের চেয়ে বেশি। তবে ধীরে ধীরে এগোতে চান টাইগার অধিনায়ক, ‘ছোট ছোটভাবে যদি আমরা এগোতে পারি তাহলে খুব ভালো। কারণ, আপনি যদি দেখেন আমরা যখন শুরু করেছিলাম, প্রথম চক্রে মাত্র ১টা ম্যাচ জিতেছিলাম। দ্বিতীয় চক্রে আমরা ৪টি ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। টার্গেট থাকবে, এবার আরও ২-৩টি ম্যাচ বেশি জিততে পারি। আমরা যদি এভাবে ছোট ছোট চিন্তা করে এগোতে পারি তাহলে কেন না? বাংলাদেশ দলও একদিন ফাইনাল খেলবে। কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ সামনের দুই বছরের মধ্যে গত বছর থেকে কীভাবে ভালো রেজাল্ট করছি আমরা।’
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা হয় দেশ ও দেশের বাইরে। ১২ টেস্টে কয়েকটি দেশের মাটিতে খেলবেন নাজমুলরা। সাদা পোশাক ও লাল বলে উন্নতি করতে হলে দেশের মাটিতে টেস্ট জেতা জরুরি। গত চক্রে চার জয়ের তিনটিই ছিল দেশের বাইরে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টি ছিল ঘরের মাঠে। উন্নতির জন্য ঘরের মাঠে জয়ের বিকল্প দেখছেন না টাইগার অধিনায়ক, ‘আমার মনে হয় আমাদের ঘরের মাঠে জিততে হবে। গত সার্কেলে আমরা ঘরের মাঠে খুবই বাজে ক্রিকেট খেলেছি। যদি ঘরের মাঠে জিততে পারতাম, তাহলে আমরা হয়তো আরও ২-৩টি ম্যাচ বেশি জিততে পারতাম। পরিকল্পনা করতে হবে, ঘরের মাঠে আমরা কীভাবে বেশি বেশি টেস্ট জিততে পারি। যখন ম্যাচ হবে তখন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে খেলতে হবে। বাইরে ভালো খেলার আত্মবিশ্বাস আমাদের কাজে দেবে। অবশ্য দেশের বাইরে যদি ভালো ফল করি, তাহলে এই সার্কেলেও ভালো ফল হবে আমাদের।’ ইনজুরি কাটিয়ে দুই বছর পর জাতীয় দলে ফিরেছেন ইবাদত হোসেন। তার অন্তর্ভুক্তিতে সন্তষ্টি প্রকাশ করেন টাইগার অধিনায়ক, ‘ইবাদত তার সেরা সময়ে ইনজুরিতে পড়েছিল। এখন সে কামব্যাক করেছে। সুযোগ এলে আবার খেলবে। এটা দলের জন্য বাড়তি একটি শক্তি হিসেবে কাজ করবে। আশা করি সুযোগ পেলে ভালো পারফর্ম করবে।’ টি-২০ অধিনায়কত্ব ছাড়া প্রসঙ্গে নাজমুল বলেন, ‘টি-২০’র নেতৃত্ব ছাড়ার পেছনে একটা কারণ ছিল যে, আমি নিজে থেকেই ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়েছিলাম। আমি আর অধিনায়কত্ব করতে চাই না, এই ফরম্যাটে। আমার নিজের ব্যাটিংটাতে একটু সময় দিতে চাচ্ছিলাম। কারণ আমাদের এত খেলা হচ্ছে টেস্ট, ওয়ানডে, টি-২০।’
শ্রীলঙ্কা সফরে নাজমুল বাহিনীকে খেলতে হবে স্বাগতিক স্পিনারদের ঘূর্ণির বিপক্ষে। ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কান স্পিনাররা দুর্বোধ্য। স্পিন আক্রমণ সামলাতে মিরপুর স্টেডিয়ামে গত দুই দিন এবড়োখেবড়ো উইকেটে ব্যাটিং করেছেন নাজমুল, লিটন, মুমিনুল, মুশফিকুর রহিমরা।