দেশে আবারও বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন ভ্যারিয়েন্ট আগের তুলনায় বেশি সংক্রামক। ফলে দ্রুত ছড়াচ্ছে।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) জানিয়েছে, চলতি বছরের সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে করোনার দুটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসি। এরা মূলত ওমিক্রণের পরিবর্তিত রূপ। এর মধ্যে এক্সএফজি ভ্যারিয়েন্টে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আইসিডিডিআরবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণায় অংশ নেওয়া হাসপাতালগুলোতে পরীক্ষাকৃত রোগীদের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশের শরীরে নতুন ধরনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বছরের শুরুতে সংক্রমণ একেবারেই কম থাকলেও বর্তমানে এ হার বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপাতত বড় ধরনের শঙ্কার কিছু নেই। তবে অসতর্ক হলে এটি বিপজ্জনক হতে পারে। আক্রান্তদের মধ্যে জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা ও দুর্বলতার মতো সাধারণ উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। তবে বয়স্ক, শিশু এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট আগের চেয়ে দ্রুত ছড়ালেও এর তীব্রতা কম। যাদের শরীরে আগে থেকেই রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো, তাদের জন্য এটা হুমকি নয়। তবে পূর্ববর্তী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ঝুঁঁকিতে আছেন। যারা করোনার পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন, তারা তুলনামূলক নিরাপদ। তিনি আরও বলেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। একটি মহল অহেতুক ভয় ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে, আতঙ্কিত নয়। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৪টি নমুনা পরীক্ষায় ১৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে আক্রান্ত ছিলেন ২৩ জন, মে মাসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ জনে। জুনের প্রথম ৯ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ জন। প্রায় দেড় বছর পর দেশে একজনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।
এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আবারও করোনা পরীক্ষার কার্যক্রম জোরদার করেছে। রাজধানীসহ বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে নমুনা পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যেসব মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে আরটিপিসিআর ল্যাব রয়েছে, সেসব স্থানে কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
এ ছাড়া সীমান্তবর্তী অঞ্চল ও বিমানবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকার পাশাপাশি জনগণকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।