ব্রাজিলের কট্টর ডানপন্থি সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর সমর্থকরা দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এবং কংগ্রেসে হামলা চালিয়েছে। রবিবার এ হামলার পর বর্তমানে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।
রয়টার্স লিখেছে, নির্বাচনের পর থেকে দুই মাস ধরে যে টানটান উত্তেজনা চলছি ব্রাজিলে, তারই বিস্ফোরণ ঘটল রবিবার। পতাকার রঙে হলুদ-সবুজ পোশাকে হাজার হাজার বলসোনারো সমর্থক প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে এ লঙ্কাকাণ্ডে অংশ নেয়। টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় বিক্ষোভকারীরা বানের পানির মতো সুপ্রিম কোর্ট ও কংগ্রেস ভবনে প্রবেশ করছে, স্লোগান দিচ্ছে, আসবাবপত্র ভাঙছে। প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসও ঘিরে রাখে। সে সময় তারা ব্রাজিলের পতাকা গায়ে জড়িয়ে ছিল। বিক্ষোভকারীদের হটাতে কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।
বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো গত অক্টোবরে বামপন্থি প্রার্থী লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভার কাছে নির্বাচনে হেরে যান। তবে তার সমর্থকরা এ হার মেনে নিতে অসম্মতি জানায় এবং তারা সামরিক উত্থানের আহ্বান জানিয়ে লুলার পদত্যাগ দাবি করে। লুলা ব্রাজিলের আরেক প্রদেশ সাও পাওলোতে দাফতরিক ভ্রমণে রয়েছেন। তিনি বিক্ষোভকারীদের ‘ধর্মান্ধ ফ্যাসিস্ট’ বলে উল্লেখ করেন এবং তাদের শাস্তি দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন। এদিকে ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অ্যালেহান্দ্রে ডি মোরেস ব্রাসিলিয়ার গভর্নর ইবানিস রোচাকে তার পদ থেকে ৯০ দিনের জন্য সরিয়ে নিয়েছেন বলে সিএনএন ব্রাজিল তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে। আদালতের এ সিদ্ধান্ত আসে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর এবং সিনেটর র?্যানডলফ রদ্রিগেজের অনুরোধের প্রেক্ষিতে। মোরেস বলেন, রবিবারের ঘটনার সময় ইবানিসের ভূমিকা ছিল ‘বেদনাদায়ক নীরব।’ এর আগে রোচা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে তিনি দাঙ্গা রুখতে না পারার কারণে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, ‘আজ শহরে যা ঘটেছে তার জন্য আমি প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আজ এ শহরে যা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য।’ এ ধরনের ঘটনা এর আগে ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হওয়ার পর তার সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে এ ধরনের হামলা চালায়। এদিকে নিরাপত্তা বাহিনী কংগ্রেস ভবনসহ সরকারি ভবনগুলো বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। বামপন্থি প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা ব্রাসিলিয়ায় সুপ্রিম কোর্ট ভবনের কাছে অবস্থান করছেন বলে সিএনএন জানিয়েছে।এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী ভিও দিনো বলেছেন, রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোয় হামলা চালানো অন্তত ২০০ দাঙ্গাবাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা সন্ত্রাসবাদ, এটা অভ্যুত্থান। আমরা নিশ্চিত যে জনগণের বিশাল একটি অংশই এ অন্ধকার (শাসন) বাস্তবায়িত হোক, তা চায় না।’ বিক্ষোভের সময় ওই অঞ্চলের বলসোনারোর মিত্রদের নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বলসোনারো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় আছেন। লুলার শপথ নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এ হামলায় তার ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট লুলা। তবে তিনি তা অস্বীকার করেছেন। বলসোনারো এক টুইটে সহিংস এই বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়েছেন।
কীভাবে হলো বিক্ষোভ : বিবিসির ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের এডিটর ভেনেসা বুশলুটার বলেন, লুইজ ইনাসিও লুলা ডি সিলভা যিনি লুলা নামেই বেশি পরিচিত, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার সপ্তাহখানেক পরই ব্রাসিলিয়ায় এ বিক্ষোভ হলো। ব্রাজিল গভীরভাবে বিভক্ত একটি দেশ এবং কংগ্রেসে হামলার ঘটনা একটি নাটকীয় প্রতীক, যা দিয়ে বোঝা যায় যে, কিছু ব্রাজিলিয়ান কতটা মরিয়া হয়ে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা চালাতে পারে। যেগুলো তাদের মতে আর প্রতিনিধিত্ব করে না।