১৮ আগস্ট, ২০২২ ০৮:০১

আমাদের মাতৃভূমিকে বাঁচান হে আল্লাহ!

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আমাদের মাতৃভূমিকে বাঁচান হে আল্লাহ!

ভয়াবহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট চলছে। সারা বিশ্বেই মুদ্রাস্ফীতির আগুন। খাদ্যের উচ্চমূল্যে দিশাহারা অধিকাংশ দেশের মানুষ। দেউলিয়ার তালিকায় নতুন নতুন দেশ যোগ হওয়ায় অপেক্ষায়। বৈশি^ক অস্থির পরিস্থিতির হাওয়া লেগেছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেও। যেনতেন হাওয়া নয়। আগুনের চুল্লির আশপাশে থাকলে যেমন তীব্র গরম হাওয়া বেরোয় সে রকম। মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট সাধারণ মানুষ। পয়সাওয়ালাদেরই এখন নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের দুর্দশা কল্পনা করলেও গা শিউরে ওঠে। এ চিত্র শুধু আমার দেশের নয়। ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোতেও মানুষ না খেয়ে থাকছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থকে জানা গেছে, উন্নত দেশের মধ্যবিত্তরা মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে এক বেলা না খেয়ে থাকছে। এটা আরও ছয় মাস আগের খবর। এখন কী অবস্থা আল্লাহই ভালো জানেন।

দেশের এমন ঘোর ক্রান্তিলগ্নে আমাদের একটিই কাজ তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। আসন্ন বিপর্যয় থেকে বাঁচতে এ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। এ কথাটি যত দ্রুত বুঝতে পারব ততই আমাদের জন্য কল্যাণ। কিন্তু আফসোসের কথা হলো, আমরা এখনো বুঝিনি, সামনে যে বুঝতে পারব লক্ষণ দেখে তা-ও মনে হচ্ছে না। সেদিন এক দোস্তের সঙ্গে দেখা করতে রাজধানীর একটি অভিজাত শপিং মলে যেতে হলো। শপিং মলটি এশিয়ার মধ্যেও অন্যতম। মনে হলো, অন্য সময়ের চেয়ে ভিড় যেন এখন একটু বেশিই। মনের ভিতর কৌতূহল জাগল। নানান কিসিমের দোকান ঘুরে দেখলাম। পোশাক-আশাক, ইলেকট্রনিক্স, কসমেটিক্স ইত্যাদি। কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বললাম। কৌতূহল মেটাতে দোকানিদের সঙ্গেও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কথা বললাম। ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এতটুকু নিশ্চিত হলাম, অধিকাংশ মানুষই মার্কেটে এসেছে অপ্রয়োজনে। তা-ও আবার নতুন মডেল, নতুন ভার্সনের আপডেট পণ্য নেওয়ার জন্য। অনেকেই বলেছেন, একটা আছে, বন্ধুমহলে বা প্রতিবেশী সহকর্মীকে দেখানোর জন্য আরেকটি পোশাক, ঘড়ি, মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি কিনেছি। মুহূর্তেই মনটা বিমর্ষ হয়ে গেল। মানুষ এতটা অবুঝ! প্রয়োজনে হাজারটা জিনিস কিনলেও আফসোস নেই। অভিজাত মানুষ অভিজাত শপিং মল থেকে কিনবে এতেও শরিয়ত ও নৈতিকতার দিক থেকে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া শুধু বিলাসিতার জন্য হাজার হাজার টাকা অপচয়! তা-ও আবার পৃথিবীর এই কঠিন সময়ে! আফসোস! আজাবের দুয়ারে দাঁড়িয়েও আমাদের অপচয়ের গুনাহ বন্ধ হলো না।

বলছিলাম তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার কথা। বাঁচার একমাত্র পথ এখন এটিই। হাদিসে থেকে জানা যায়, এমন একটা সময় আসবে তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। এখন আল্লাহ হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। মায়াভরা কণ্ঠে বান্দাকে ডাকছেন। তখন আল্লাহ হাত গুটিয়ে নেবেন। মায়াকে পাশে রেখে রাগের চেহারায় প্রকাশ হবেন। সেদিন মানুষ কাঁদবে, ক্ষমা চাইবে, ইসতিগফার করবে, তওবার দোয়া পড়বে। কিন্তু বান্দার তওবা বান্দার কাছেই ফিরে আসবে। শুকরিয়ার বিষয় হলো, সে কঠিন সময় এখনো আসেনি। আল্লাহর প্রেমের হাত, মায়ার ডাক এখনো আমাদের জন্য অবারিত। আর আমরা ঘুমে বেঘোর!

আরেকটি বিষয়। তওবার দরজা বন্ধ হওয়ার চেয়ে আরও ভয়ংকর শাস্তি আছে বান্দার জন্য। সেটা এখনো হতে পারে, একটু পরেও হতে পারে। তা হলো, তওবার সুযোগ হাতছাড়া হওয়া। মৃত্যু নামক কঠিন সত্য এসে আমাদের তওবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে দেয়। এটা এমন এক ভয়ংকর বিষয় যে, খুব কম মানুষই জীবনে তওবার সুযোগ পায়। জীবন তো চলছেই। প্রতিদিন সকালে বের হচ্ছি। বেলা শেষে ঘরেও ফিরছি। এভাবেই তো জীবন কেটে যাচ্ছে। দৈনন্দিন রুটিন আমাদের ভুলিয়ে দেয় মৃত্যুকে। আমরাও ভুলে থাকি এ মহাসত্যকে। ভুলে যাই তওবা করার বিষয়টি। একসময় হঠাৎ মালাকুল মাউত এসে হাজির। হে বন্ধু! সতর্ক হও! তওবা কর। বৈশি^ক সংকট থেকে নিজে বাঁচো, পরিবারকে বাঁচাও। দুঃসময়ে যেমন মাকে ফেলে রাখা কবিরা গুনাহ, তেমনি মাতৃভূমির এ কঠিন সময়ে ক্ষোভ-হতাশা মনে পুষে রাখাও মহা অন্যায়। হে আল্লাহ! আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমিকে আপনি সব ধরনের বালামুসিবত থেকে হেফাজত করুন। অর্থনৈতিক দীনতা কাটিয়ে ওঠার তৌফিক দিন। আমাদের নেতানেত্রীদের হৃদয়ে আপনার ভয় জাগিয়ে দিন। দুর্নীতি, অন্যায় থেকে সবাইকে দূরে রাখুন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি পীর সাহেব, আউলিয়ানগর।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর