মুসলিম ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে ইসহাক (আ.) ছিলেন ইবরাহিম (আ.)-এর পুত্র এবং আল্লাহর সম্মানিত নবী। বনি ইসরাঈল ইসহাক (আ.)-এর পুত্র ইয়াকুব (আ.)-এর বংশধর। ইসহাক (আ.) মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি সব আসমানি ধর্মের অনুসারীদের কাছে অতি সম্মানিত।
ফিলিস্তিনের হেবরনে হারাম আল-ইবরাহিমি কমপ্লেক্সে নবী ইসহাক (আ.) ও তাঁর স্ত্রী রেবেকার কবর আছে। একই কমপ্লেক্সে ইবরাহিম (আ.), ইয়াকুব (আ.) ও ইউসুফ (আ.)-এর কবর আছে।
ইবরাহিমি কমপ্লেক্সে মুসলিমদের মসজিদ এবং ইহুদিদের সিনাগগ রয়েছে। প্রত্যেকের প্রার্থনার স্থান ও প্রবেশপথ ভিন্ন। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে উভয় সম্প্রদায় নিজ নিজ উৎসবের সময় বছরের ১০ দিন করে পুরো কমপ্লেক্সে প্রবেশাধিকার লাভ করে থাকে।
তবে সম্প্রতি ইসরায়েল সরকার মুসলিমদের ইবরাহিমি কমপ্লেক্সে প্রবেশে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। অবশ্য ১৯৬৭ সালের আগ পর্যন্ত এখানে শুধু মুসলমানরাই ইবাদত করার সুযোগ পেত।
কোরআন ও হাদিসে ইসহাক (আ.) সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। তবে ঐতিহাসিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, ইবরাহিম (আ.)-এর বয়স যখন ১০০ বছর এবং তাঁর স্ত্রী সারাহর বয়স ৮০ বছর তখন ইসহাক (আ.)-এর জন্ম হয়। বড় ভাই ইসমাইল (আ.)-এর ১৪ বছর পর তিনি পৃথিবীতে আগমন করেন।
ইবরাহিম (আ.) যখন জীবনছায়াহ্নে উপনীত হন, তখন তিনি ইচ্ছা করেন ছেলে ইসহাককে বিয়ে দেবেন। কিন্তু তিনি চাচ্ছিলেন না যে ইসহাক (আ.) কোনো কেনানি নারীকে বিয়ে করুক। কেননা তারা ছিল পৌত্তলিক। ইবরাহিম (আ.) ছেলের জন্য পাত্রী অনুসন্ধান করতে তাঁর বিশ্বস্ত ভৃত্যদের ইরাকের হারানে পাঠালেন।
তারা ইবরাহিম (আ.)-এর ভাই বেথুয়েল ইবনে নাহুরের মেয়ে রেবেকাকে পাত্রী হিসেবে পছন্দ করেন। ইবরাহিম (আ.) রেবেকার সঙ্গে ছেলে ইসহাকের বিয়ে দেন। তাদের ঔরসে যমজ সন্তান আল-ইস ও ইয়াকুব (আ.)-এর জন্ম হয়।
যৌবনে পদার্পণের পর ইয়াকুব (আ.) নবুয়ত ও ধর্মীয় নেতৃত্ব লাভ করলে ভাই আল-ইস চরম ক্ষুব্ধ হয় এবং ভাইকে হত্যার চিন্তা করে। ফলে ইয়াকুব (আ.) দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। রেবেকা ছাড়াও ইয়াকুব (আ.)-এর আরো তিনজন স্ত্রী ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, রোমানরা আল-ইসের বংশধর।
ইসহাক (আ.) কেনানের হেবরন গ্রামে বসবাস করতেন, যা আধুনিক ফিলিস্তিনের হেবরন শহর নামে পরিচিত। এখানে ইবরাহিম (আ.)-ও তাঁর জীবনের শেষ সময়টুকু কাটান। হেবরনেই ইসহাক (আ.)-এর ইন্তেকাল হয়। তিনি ১৮০ বছর বয়স পেয়েছিলেন। তাঁকে পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর পাশে একটি গুহার ভেতর দাফন করা হয়।
পবিত্র কোরআনের ১৭ স্থানে ইসহাক (আ.)-এর বর্ণনা এসেছে। যেমন—আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাঁকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাকের, সে ছিল এক নবী, সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম। আমি তাঁকে বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাককেও; তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক নিজেদের প্রতি স্পষ্ট অত্যাচারী।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১১২-১১৩)
ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবার তিন আসমানি ধর্মের অনুসারীদের কাছেই অত্যন্ত সম্মানিত। ফলে ইসলামপূর্ব যুগেও তাঁদের কবরের স্থানটি মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সর্বপ্রথম হারাম আল-ইবরাহিমের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন রাজা প্রথম হেরোড, তিনি রোমানদের সমর্থনে জেরুজালেম শাসন করতেন। জেরুজালেম মুসলমানদের অধীনে আসার পর ধারাবাহিকভাবে সব মুসলিম শাসকই হারাম আল-ইবরাহিমের সংস্কার ও উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন। উমাইয়ারা হারাম আল-ইবরাহিমে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন।
মুসলিম শাসকদের মধ্যে আমির বদরুদ্দিন জামালি, সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবি, আমির তানজাক আন-নাসিরি, সুলতান জাহির বারবাক, আমির আলামুদ্দিন সানজার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এর ভেতর সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবির ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কেননা তিনি ইউরোপীয় দখলদারদের হাত থেকে জেরুজালেম উদ্ধার করেন। ক্রুসেডাররা প্রাচীন ইবরাহিমি মসজিদ ভেঙে গির্জা তৈরি করেছিল। সুলতান সালাউদ্দিন পুনরায় সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেন।
তথ্যসূত্র : ইসলামিক ল্যান্ডমার্ক, দিস উইক প্যালেস্টাইন ও উইকিপিডিয়া
বিডি প্রতিদিন/মুসা