সামনেই বড়দিন, ২৫শে ডিসেম্বর। এই উপলক্ষে আলোকমালায় সেজে উঠেছে তিলোত্তমা কলকাতা। রংবেরঙের আলোতে নজর কেড়েছে মধ্য কলকাতার পার্ক স্ট্রিট নিউ মার্কেট চত্বর সাজানো হয়েছে বউ ব্যারাকো কলকাতার বাইরে ক্রিসমাসের সাজে সেজে উঠেছে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, চন্দননগরসহ পশ্চিমবঙ্গের দর্শনীয় স্থান ও চার্চ গুলিও।
বুধবার কলকাতায় ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এদিন সন্ধ্যায় কলকাতার অ্যালেন পার্ক ও বো-ব্যারাকে ক্রিসমাস ফেস্টিভেলের উদ্বোধন করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সাথেই এদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, পর্যটন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন, অভিনেত্রী সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, আর্চ বিশপ অফ ক্যালকাটা রেভারেন্ড টমাস ডিসুজা, মুখ্য সচিব হরি কৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্র সচিব বিপি গোপালিকা, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল প্রমূখ।
বড়দিন উপলক্ষে অন্য বারের মতো এবারও অ্যালেন পার্ককে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে রাজ্য পর্যটন দপ্তর ও কলকাতা পৌরসভা। বিভিন্ন মডেল দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে যীশুর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়। আলো দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা অ্যালেন পার্ক।
বর্ষ শেষের উৎসব মঞ্চ থেকে সবাইকে বড়দিন ও নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে মমতা বলেন, একতাই আমাদের শক্তি। বিভেদ হলো বিপদজনক। আজকের দিনে এসে আমার খুব ভালো লাগছে। আমরা সব ধর্মের সকলকে নিয়েই চলি।
আর মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে কলকাতায় শুরু হয়ে গেল। সন্ধ্যা হতেই ৮ থেকে ৮০, সব ধরনের মানুষের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে পার্ক স্ট্রিট চত্বর। লাল সান্তা টুপি মাথায় দিয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছোট থেকে বড় সকলেই।
নতুন আলোর সাজে সেজে উঠেছে কলকাতার নিউমার্কেট চত্বরও। বড়দিনের আগেই নিয়ন আলোয় সেজে উঠেছে কলকাতার নিউ মার্কেট। বহুতল ভবন কিংবা শপিং মলগুলোতে খুলছে টুনি লাইট। রাতে এ এক অন্য কলকাতা। রাত যত বাড়ছে মোহময়ী হয়ে উঠেছে এই এলাকা।
রাস্তার দুই ধারে সান্তাক্লজ, সান্তা টুপি, ক্রিসমাস ট্রি, বাতি লাগানো মাথার ব্যান্ড সহ বড়দিনের বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ক্রেতারাও দেখছেন, দরদাম করছেন, দামে পোষালে আবার কিনছেনও।
স্থানীয় মানুষেরা তো আছেনই সেইসঙ্গে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরা সন্ধ্যা হলেই ভিড় জমাচ্ছেন মারকুইস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, লিন্ডসে স্ট্রিট সহ বড় রাস্তাগুলোতে। কলকাতাবাসী হোক বা বিদেশি পর্যটক-বড়দিনের উষ্ণতা থেকে বঞ্চিত হতে চাইছে না কেউই।
তাই রাত বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কালো মাথার ভিড়। কেউ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে, আবার কেউ নিজের পছন্দের মানুষের সঙ্গে বড় দিনের আগে বড় দিন উপভোগ করতে রাজপথে নেমেছেন।
আবার বহু মানুষ নিউমার্কেট ঘুরে বিভিন্ন ফুড স্টলের খাবারের স্বাদ নিতে ব্যস্ত। অনেকেই আবার কিনতে ব্যস্ত বড়দিনের রংবেরঙের সামগ্রী। অনেকেই দেখা গেল আনন্দের মুহূর্তগুলো মোবাইল বন্দী করতে।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাসিন্দা লিটন জানান, বাংলাদেশে এখন সব স্কুলগুলিতে পরীক্ষা শেষ তাছাড়া এই উৎসবের মরশুমে কলকাতার দোকানগুলিতে বিশেষ ছাড় দেয় যার জন্য অনেক মানুষ এখানে চলে আসেন।
ঢাকার আরেক বাসিন্দা সায়মন জানান, গত দুবছর করনার কারণে সেইভাবে উৎসবের চেহারা নেয়নি কিন্তু এবার পুজোর মতনই নতুন করে সেজে উঠেছে নিউ মার্কেট। অনেক লোক রাস্তায় দেখা যাচ্ছে।
কলকাতা নিউ মার্কেটের ক্রিসমাসের বাহারি জিনিসের বিক্রেতা মোহাম্মদ এরশাদ জানান, বড়দিনের আগে আমাদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে। টুপি হেয়ার ব্যান্ড এসবের চাহিদাই বেশি।
বড়দিন উপলক্ষে আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছে কলকাতার ক্যাথিড্রাল রোড, হেয়ার স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট চত্বর। কলকাতার পাশাপাশি দীঘার সমুদ্রসৈকত, দার্জিলিংও সেজে উঠেছে। কেক এবং অন্যান্য সামগ্রীর দোকান লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে। উৎসব উপলক্ষে যে কোন রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশে নিরাপত্তায় জোরদার করা হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের হিসেবে আজ থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কলকাতার ক্রিসমাস কার্নিভালে যোগ দেবে কয়েক লাখ মানুষ।
বিডি প্রতিদিন/এএ