রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
আইসিসিবিতে জমজমাট ইফতার

এক ছাদের নিচে সবকিছু

রাশেদ হোসাইন

এক ছাদের নিচে সবকিছু

রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) পুষ্পাঞ্জলি হলে মিলছে ইফতারের সব আইটেমের সুবিধা এক ছাদের নিচে। কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে আধুনিক মানের সব ধরনের সুবিধা রয়েছে এখানে। কেউ চাইলে বসে খেতে পারবেন কিংবা নিয়েও যেতে পারবেন। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে ইফতারের সময় পর্যন্ত চলে এ আয়োজন। আইসিসিবিতে কথা হয় রাজধানীর বারিধারা এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিনের সঙ্গে। তিনি এসেছেন ইফতার কিনতে। তিনি বলেন, ‘অফিস থেকে ফেরার পথে এখান থেকে ইফতারি কিনে বাসায় নিয়ে যাই। এখানকার ইফতারিতে পুরান ঢাকার পুরো ফ্লেভার পাওয়া যায়। তাই কষ্ট করে আর পুরান ঢাকায় যাওয়া লাগে না। এরপর আবার বাসার কাছেই এত বড় একটি ইফতারির বাজার। তাই অফিস থেকে ফেরার পথে আইসিসিবি হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এখন বেশ কিছু আইটেমের ইফতার কিনেছি, আরও কিছু কিনব। এখান থেকে আমি আগেও অনেকবার কিনেছি। খাবারগুলো সবই হাইজেনিক। পুরান ঢাকার সব আইটেম এখানে পাওয়া যায়। বিশেষ করে আমি বাসমতী চালের কাচ্চি বিরিয়ানি নেওয়ার জন্য এসেছি। দামেও তুলনামূলক কমে সবকিছু পাওয়া যায় এখানে।’ নিকুঞ্জ থেকে এসেছেন খালিদ রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার হালিম খুব পছন্দ। এখানে বিভিন্ন ধরনের শাহী হালিম পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাহারি রকমের জুস বিক্রি হয়। আমি এসেছি ঠাণ্ডা-গরমের দোকানে। এখানে বিভিন্ন ধরনের জুস বিক্রি হয়। স্ট্রবেরি আর তরমুজের জুস ক্রয় করেছি।’ একসময় ঢাকা উত্তরের মানুষদের মজাদার ইফতারের জন্য যাওয়া লাগত পুরান ঢাকায়। উত্তর ঢাকা থেকে চৈত্রের দাবদাহ ও যানজটের কারণে সেটা অনেকের জন্য অসম্ভব হয়ে উঠত। অনেক সময় দেখা যেত, পুরান ঢাকা যেতেই ইফতারের সময় হয়ে যায়। এ অবস্থায় ঢাকা উত্তরের ভোজনরসিকদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার এই আয়োজন। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, ধুলাবালি মুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পুরান ঢাকার ইফতার এখন সহজেই পাওয়া যায় এই বাজারে। আইসিসিবির পুষ্পাঞ্জলি হল ঘুরে দেখা যায়, আইসিসিবি হেরিটেজ রেস্টুরেন্টসহ পুরান ঢাকার বিখ্যাত সব খাবারের ৩২টি স্টলে ক্রেতাদের ভিড়। ঢাকাই ইফতারের মুখরোচক আয়োজন ছাড়াও রয়েছে নানাবিধ তেহারি, বিরিয়ানি, কাচ্চি, হালিম ও শাহী আইটেমের সমাহার। এই বাজারে পুরান ঢাকার বিভিন্ন খাবারের মধ্যে থাকছে মজাদার কাবাব, ডিমের চাপ, হোল মাটন রোস্ট, মাটন লেগ রোস্ট, হোল চিকেন মুসাল্লাম, চিকেন রোস্ট, মাটন কাচ্চি (বাসমতি ও চিনিগুঁড়া), বিফ তেহারি ও বিফ পাক্কি, ভেজিটেবল, পিঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, আলুর দম, জিলাপি, কাচ্চি, তেহারির মতো মজাদার খাবারসহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন। দামও রয়েছে মোটামুটি নাগালের ভিতর।

ইফতারের বিভিন্ন আইটেমের পাশাপাশি ‘ঠাণ্ডা-গরম’ স্টলের বিক্রয়কর্মী সোহাগ বলেন, ‘আমাদের স্টলে প্রায় ৩০ রকমের বেশি ফলের জুস পাওয়া যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি এসব ফলের জুসের দামও নাগালের মধ্যেই। এখানে আম, লিচু, তরমুজ, কালো জাম, তেঁতুল, আঙুর, আনার, চালতা, আমড়া, ডেউয়া, স্ট্রবেরি, আপেল, বরইসহ মজাদার স্বাদের জুস রয়েছে। আমরা বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। ফলের দামের ওপর নির্ভর করে আমরা জুসের দাম নির্ধারণ করি।’

প্রতি বছর রোজায় আইসিসিবির ইফতারি বাজারে অংশ নেয় জসিম উদ্দিন ক্যাটারিং। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রান্নাবান্নার সঙ্গে যুক্ত এর স্বত্বাধিকারী মো. জসিম উদ্দিন বাবুর্চি। এখানকার ইফতারি বাজারে প্রতিবারই অংশ নেওয়ায় আগত ক্রেতাদের অনেকেই এখানকার খাবারের স্বাদের সঙ্গে পূর্বপরিচিত। তাই বেচাবিক্রিও হয় ভালো। জসিম উদ্দিন ক্যাটারিংয়ে রয়েছে মাটন কাচ্চি বিরিয়ানি, বিফ তেহারি, বিফ পাক্কি বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, চিকেন ফুল রোস্ট, মাটন লেগ রোস্ট, কাবাব, জর্দা, সাসলিক, বোরহানি, লাবান, জিলাপি, লুচি, কবুতর ভুনা, বিফ কালো ভুনা, চিকেন কাঠিকাবাবসহ চিকেন গ্রিল কাবাব।

আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার ডেপুটি ম্যানেজার (ব্র্যান্ড) মেহেদি হাসান মোল্লা বলেন, ‘এ বছর শুরু থেকে ভালোই সাড়া পাচ্ছি। গত দুই দিন ভালোই ক্রেতার সমাগম ঘটেছে। এবার আইসিসিবিতে সপ্তমবারের মতো চলছে পুরান ঢাকার ইফতারির বাজার। আইসিসিবির হেরিটেজ রেস্টুরেন্টসহ মোট ৩২টি স্টল থাকছে। আইসিসিবির ৫ নম্বর হলে নিরিবিলি পরিবেশে এ আয়োজন চলবে। কেউ চাইলে বসে ইফতার করতে পারবেন। আবার কেউ চাইলে নিয়ে যেতে পারবেন। কোনো রকম ভিড়ের ঝামেলা ছাড়াই আইসিসিবির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে খাঁটি ঢাকাই খাবারদাবার। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে ইফতারের সময় পর্যন্ত এ আয়োজন চলছে।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর