সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অতিকথনই কাল হয়েছে। দুর্নীতি এবং অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে দেশের সব প্রতিষ্ঠান। দল এবং দেশ ধ্বংসের মুখে চলে গেছে। তাঁদেরকে কেউ কিছু বলার সাহসই রাখতেন না। তাঁদের মতের বাইরে কোনো পরামর্শ দিতে গেলে সবাইকে চক্ষুশূল হতে হতো। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এসব কথা বলেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
সালমান এফ রহমানের বরাত দিয়ে সূত্র আরও বলছেন, শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্দেশ পালন করতে গিয়েই অনেক অনিয়মের সঙ্গে তাঁকে জড়াতে হয়েছে। প্রায়ই তদবির থাকত সজীব ওয়াদেজ জয় এবং শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার। তাঁদের দাবি পূরণ করায় ব্যস্ত সময় পার করতে হতো সরকারের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাকে। কমিশনের অর্থ জায়গামতো পৌঁছানোর বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হতো তাঁদের। ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বড় একটি অংশ সব সময়ই শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের দিতে হতো। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারের বিষয়টিও তাঁদের নির্দেশের বাইরে হতো না।
সালমানের দাবি, তাঁর বিষয়ে পাশের একটি দেশের ভীষণ আপত্তি ছিল। তারা কোনোভাবেই তাঁকে মেনে নিতে পারেনি। তবু শেখ হাসিনা তাঁকে রেখেছিলেন। এজন্য উনার কথা না শুনলে অনেক প্রকৃত ব্যবসায়ী আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতেন।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিমান্ডে থাকা সবাই সবকিছুতেই শেখ হাসিনার কথা বলছেন। তবে এখনো গ্রেপ্তার হননি এমন কিছু ব্যক্তির নাম তাঁদের জবানি থেকে উঠে এসেছে। এসব তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পেলে তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাড্ডায় সুমন সিকদারকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে ১৯ আগস্ট সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনিকে বারিধারা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আগের মেয়াদে শিক্ষামন্ত্রী থাকার সময় তাঁর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ছিল। তাঁর সহোদর ডা. টিপুকে দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং চাঁদপুরে দীপু মনির যাবতীয় কর্মকা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও অবহিত ছিল। তবু রহস্যজনক কারণে দীপুমনির প্রতি বিশেষ নজর ছিল শেখ হাসিনার। গতকাল পর্যন্ত তাঁকে নানাভাবে জিজ্ঞসাবাদ করা হলেও তিনি মুখ খোলেননি। একই অবস্থা সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ক্ষেত্রেও। জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতেই তিনি কান্নাকাটি শুরু করেন। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি, এটুআই প্রকল্প, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, হাইটেক পার্ক, আইটি পার্ক তৈরির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের বিষয়টি ছিল অনেকটা ওপেন সিক্রেট। তবে গতকাল পর্যন্ত তিনিও সবকিছু শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছিলেন। রিমান্ডে থাকা রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) এম সোহায়েলের কাছ থেকেও অনেক তথ্য আদায় করতে পারেননি তদন্তসংশ্লিষ্টরা। নানাভাবে তদন্তসংশ্লিষ্টদের বিভ্রান্তের চেষ্টা করছেন তিনি। ১৩ আগস্ট পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। সবশেষ গতকাল সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ মোট ১৪ জন প্রভাবশালীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।