দেশে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর হাতে দমন করবে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, বিদ্যুৎ দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। আর সরকার এটি যেভাবেই হোক পালন করবে। এ ক্ষেত্রে যারাই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্ন করার মতো আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দাবিদাওয়ার নামে কোনো নাশকতামূলক কার্যক্রম করলে বিদ্যুতের যে কোনো সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাশকতামূলক কাজের জন্য দেশে শাস্তির যে বিধান আছে সেটি পুরোপুরিভাবে প্রয়োগ করা হবে। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে বিদ্যুতের ব্ল্যাকআউট বা বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো ঝুঁকি তিনি দেখছেন না। আর এমন যাতে না হয় তার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
জানা যায়, চলমান আন্দোলনের ফলে দেশের বিদ্যুতের বিভিন্ন সাবস্টেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে এরই মধ্যে সব ডেপুটি কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য লোকবলও তৈরি আছে। যদি পবিস কর্মকর্তারা মনে করেন যে, তারা দায়িত্ব পালন করবেন না, তাহলে অন্য লোক দিয়ে এই কাজ করানো হবে।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কিছু দাবি নিয়ে প্রায় দুই মাসের মতো আন্দোলন করে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কমিটি করে দিই। পল্লী বিদ্যুতের (আরইবি) চেয়ারম্যানসহ তারা বৈঠক করেন। পবিসের যেসব দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব সেগুলো মেনে নিয়েছি। এর পর আরও দুটি দাবি পবিসের কর্মকর্তারা করেন। এর একটি হচ্ছে আরইবি ও পবিসকে একীভূত করা। আরেকটি দাবি হচ্ছে পবিস-এর যারা অস্থায়ী তাদের স্থায়ী করা। আরইবি ও পবিস এখন এক করার কথা হচ্ছে- তাহলে প্রশ্ন আসছে আগে কেন তাদের আলাদা করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, চাইলেই দাবি মেনে নেওয়া হবে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। আমরা এও বলিনি যে, আমরা এই দাবিগুলো দেখব না। কিন্তু এখনই ঘোষণা দিতে হবে- এমন কিছু না। পবিস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যুতের সাবস্টেশন বন্ধ করে দিয়েছে। এটা কোনো বাসাবাড়ির সুইচ না যে, ইচ্ছা হলো আর তারা বন্ধ করে দিলেন। আরইবির আইনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা। পবিস কর্মকর্তাদের বুঝতে হবে সাবস্টেশন ও বিদ্যুতের লাইন কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি না। বিদ্যুৎ দেওয়ার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। সংবিধানে বলা আছে, পল্লী বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে উন্নয়ন করা হবে। এই অঙ্গীকার মেনে চলার জন্য যা কিছু দরকার আমরা করব। আমরা বলেছি, বিদ্যুৎ বন্ধ করার কারও কোনো অধিকার নেই। পবিস কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ বন্ধ করার যে কাজটি করেছেন তা বেআইনি, তারা অন্যায় করেছেন। আশা করব ভবিষ্যতে তারা এ জাতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকবেন। পবিস কর্মকর্তারা আরইবির কিছু দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেওয়া হলে আমরা তা খতিয়ে দেখব।
পবিসের আরও আট কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ : পল্লী বিদ্যুতের ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। এসব কর্মকর্তা বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চাকরিচ্যুত ৩১ কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গতকাল এক অফিস আদেশে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস-১) সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবদুল্লা আল মামুনকে রাজশাহী জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে, নরসিংদী পবিস-১ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আবদুল্লাহ আল হাদীকে চট্টগ্রাম জোনে, নরসিংদী পবিস-২ এর জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়াকে কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা পবিস-১ এর জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার তামজিদুল ইসলামকে রংপুর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে, নওগাঁ পবিস-২ এর জেনারেল ম্যানেজার শাহ মো. রাজ্জাকুর রহমানকে চট্টগ্রাম জোনে ও গাজীপুর পবিস-১ এর ওয়্যারিং পরিদর্শক শেখ রহমত উল্লাহ নাজিরকে নীলফামারী নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। এ আরও দুজনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। প্রসঙ্গত, গত ১৬ অক্টোবর পবিসের ২০ জন জিএম, ডিজিএম ও এজিএমের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাপরিপন্থি কার্যকলাপ ছাড়াও নির্দেশনা অবজ্ঞাসহ কয়েকটি অভিযোগ এনে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এরই মধ্যে ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। এর প্রতিবাদে গত ১৭ অক্টোবর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি চাকরির অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার না করলে সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেয় বৈষম্যবিরোধী পল্লী বিদ্যুতের সমন্বয়করা। সেই সঙ্গে আরইবির চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিও জানান তারা। এদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন পবিস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, সেদিন সন্ধ্যায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমস্যা সমাধান এবং আটকদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলে রবিবার পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।