ভারতের চব্বিশ পরগনার ক্যানিং থানা। বুধবার ভরদুপুরে সবে একটু বিশ্রাম নিতে যাচ্ছিলেন ওসি সতীনাথ চট্টোরাজ। আচমকাই সেখানে হাজির আকিউর মোল্লা। কাঁদো কাঁদো দশা। লুঙ্গির খুঁট দিয়ে মাথার ঘাম আর চোখের জল মুছে বললেন, ‘‘হুজুর, আমার ঘোড়াকে মেরে ফেলেছে আর একটা পাগলা ঘোড়া। তার শাস্তি চাই। আর আমার চাই ক্ষতিপূরণ।’’
‘‘আগে একটু জিরিয়ে নাও, বাকি কথা শুনছি পরে’’— আকিউরের জন্য চা-বিস্কুটের অর্ডার করে ওসিও ভাবতে বসেন, কী করণীয়। একটু ধাতস্থ হয়ে আকিউর জানান, তার বাড়ি ভাঙড়ের নাংলা গ্রামে। মণি তার আদরের ঘোড়া। বছর পাঁচেকের টগবগে মণি মাঠে দৌড়ে বহু পুরস্কার এনে দিয়েছে মনিবকে। সেই ঘোড়াই মারা গিয়েছে দিন তিনেক আগে।
কী ভাবে? আকিউর পুলিশকে জানান, সোনারপুরে আড্ডিরাবাদে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় ছুটতে নেমেছিল মণি। অন্য একটি পাগলা ঘোড়া তাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়। মাঠেই মারা যায় মণি। মলিন ব্যাগ থেকে তার ডেথ সার্টিফিকেটও সঙ্গে করে এনেছিলেন সদ্য ঘোড়া-হারা মনিব। পুলিশকে দেখান সে সব। মঙ্গলবারই স্থানীয় পঞ্চায়েতকে জানিয়ে মণিকে কবর দিয়েছেন আকিউর। পুলিশকে তিনি জানান, ‘খুনি’ ঘোড়া থাকে ক্যানিংয়ের ট্যাংরাখালির এক আস্তাবলে। সেখানেই তার মনিবের বাড়ি। এ বার পুলিশ এর একটা বিহিত করুক।
পুলিশ কর্তারা আমতা আমতা করে বলেন, আকিউরের যন্ত্রণাটা তারা স্পষ্ট বুঝতে পারছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ কিছু করার নেই। সে সব কথা আকিউর কানে উঠলে তো হয়! শেষমেশ একটি সাধারণ ডায়েরি নেওয়া হয়েছে।
পাগলা ঘোড়া না তার মনিব— কার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে হবে, তা ভেবে আপাতত পাগল দশা পুলিশেরও। সে সব নিয়ে অবশ্য ভাবছেন না আকিউর। লুঙ্গির খুঁট দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে থানা থেকে বেরোনোর সময়ে বলে গেলেন, ‘‘মণিটা এমন অকালে মারা গেল, দেশে কী আইন-আদালত বলে কিছু নেই!’’
সুত্র: আনন্দবাজার
বিডি-প্রতিদিন/০৪ জনু, ২০১৫/মাহবুব